শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ বৈশাখ ২০ ১৪৩১ ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫
পাবনার খবর
প্রকাশিত: ১৩ জুন ২০২৩
দেশের একমাত্র বিশেষায়িত মানসিক হাসপাতালটি পাবনায় অবস্থিত। ১৯৫৭ সালে এ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেছিলেন পাবনা জেলার তখনকার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ হোসেন গাংগুলী। ১৯৫৭ সালের জুলাই মাসে পাবনা শহরের শীতলাই জমিদারবাড়িতে ৬০টি শয্যা নিয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। পরের বছর মে মাসে পাবনা শহর থেকে তিন মাইল পশ্চিমে অবস্থিত হেমায়েতপুরে এ মানসিক হাসপাতালটি স্থায়ীভাবে একটি ভবনে স্থানান্তরিত হয়। ১১১ একর জমিতে হাসপাতাল নির্মাণ শুরু হয়।
পাবনা জেলা গেজেটিয়ার সূত্রে জানা যায়, এ উপমহাদেশে যত মানসিক হাসপাতাল নির্মিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে পাবনার হাসপাতালটির ভবন নির্মাণ কৌশলে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। এ দালানের বিভিন্ন খণ্ড অর্ধবৃত্তাকার সংযোগ-স্থাপক পথ দ্বারা যুক্ত। উপমহাদেশে এটিই একমাত্র মানসিক হাসপাতাল, যেখানে রোগীদের রাখার জন্য কোনো সেল নেই।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানসিক রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর্যায়ক্রমে হাসপাতালটি ৩৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এতেও রোগী ভর্তির চাপ অব্যাহত থাকলে ১৫০ শয্যার পেয়িং বেড সংযুক্ত করে ৫০০ বেডে উন্নীত করা হয়। নন পেয়িং বেড পরিপূর্ণ থাকলেও পেয়িং বেড সর্বদাই কিছু খালি থাকে। ফলে নন পেয়িং বেড আরো বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সময় সেবাগ্রহীতা ও সাধারণ জনগণের দাবি থাকলেও সেটা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
হাসপাতালটি স্থাপনের পর থেকে তেমন কোনো সংস্কার হয়নি। এমনকি বহির্বিভাগে রোগীদের সেবা প্রদানের জন্য কোনো অবকাঠামো না থাকায় ১৯৫৭ সালে স্থাপিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের শিক্ষা গ্রহণের জন্য অবতৈনিক একটি স্কুলে বর্তমানে বহির্বিভাগের কাজ চালানো হচ্ছে। এ ইমারত পুরনো হওয়ায় বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে ছাদ দিয়ে। দূরদূরান্ত থেকে আগত রোগীদের ও তাদের সঙ্গে আগত স্বজনদের জন্য কোনো শৌচাগার নেই। প্রাকৃতির ডাকে বিপাকে পড়তে হয় তাদের। দূর থেকে কোনো রোগী নিয়ে এলে সঙ্গে তাকে ভর্তি বা চিকিৎসাসেবা নেয়ার জন্য তাদের অভিভাবকদের থাকার কোনো ব্যবস্থা এমনকি খাবার কোনো হোটেলও নেই এখানে। এখান থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে গিয়ে থাকা ও খাবার ব্যবস্থা করতে হয়। স্থানীয়ভাবে হাসপাতালে দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালকরা হাসপাতালের বিভিন্ন সমস্যা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অবহিত করেছেন।
দেশে মানসিক রোগী বৃদ্ধি ও তাদের সুষ্ঠু মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে পাবনার মানসিক হাসপাতালকে অত্যাধুনিক বিশ্বমানের উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি পরিকল্পনা সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় পাবনা মানসিক হাসপাতালকে আন্তর্জাতিক মানে রূপান্তরকরণে একটি বিশেষজ্ঞ কারিগরি টিম গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশী-বিদেশী মানসিক রোগের বিষয়ে অভিজ্ঞ, দেশী-বিদেশী মানসিক রোগের বিশেষজ্ঞ ও গতপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি কারিগরি টিম গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে জায়গা থাকায় জমি অধিগ্রহণের কোনো ঝামেলা নেই বলে জানানো হয়েছে। সভায় পরিকল্পনার সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দ্রুত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
পাবনার আধুনিক মানের হাসপাতালটিতে মানসিক রোগী এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা রাখা হবে। এখানে আধুনিক মানের ওয়ার্ড, রোগী পুনর্বাসন সেন্টার, বৃত্তিমূলক সেন্টার, মিউজিক্যাল থেরাপি, চিত্রাঙ্কন সেন্টার, হাফওয়ে হাউজ, চাইল্ড সাইকিয়াট্রি, অটিজম সেন্টার, সার্বক্ষণিক জরুরি বিভাগ, অ্যামিউজমেন্ট সেন্টার, গার্ডেনিং, সুইমিং, ক্যাটল ফার্মি, সাইকিয়াট্রিক ট্রেনিং সেন্টার, আধুনিক প্যাথলজি বিভাগ, অর্গানোগ্রাম, লন্ড্রি প্লান্ট, আধুনিক স্টোর ভবন, আধুনিক প্রশাসনিক ভবন, বহির্বিভাগ, যানবাহন সুযোগ-সুবিধা, আধুনিক ডরমিটরি, চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসন সেন্টার, সাইকিয়াট্রি বিশেষজ্ঞ সৃষ্টির জন্য এমফিল, এসসিপিএস, এমডি ইত্যাদি কোর্স চালু, প্লে গ্রাউন্ড, ওয়াকওয়েসহ বিশ্বমানের অত্যাধুনিক হাসপাতালে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিশ্বের যেকোনো দেশের রোগীরা এখানে চিকিৎসাসেবা নিতে ও ভর্তি হতে পারবে। এছাড়া হাসপাতালটিতে মানসিক রোগের গবেষণাগার স্থাপন করা হবে। বিশ্বের যেকোনো দেশের মানুষ এ হাসপাতালে গবেষণার সুযোগ পাবে। মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা গবেষণা করে মানসিক রোগের ওপর ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করতে পারবে। সেই সঙ্গে মানসিক রোগের ওপর যেসব দেশী-বিদেশী শিক্ষার্থী লেখাপড়া করতে আগ্রহী তারা এ হাসপাতালেই লেখাপড়া করতে পারবে।
পাবনা মানসিক হাসপাতালের ডা. শাকফাত ওয়াহিদ জানান, ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর এ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় পাবনার মানসিক হাসপাতালকে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতালে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এর পরই পাবনা মানসিক হাসপাতালটির কাজের জন্য উচ্চ পর্যায়ের পরিদর্শক দল হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন। এরপর পরবর্তী কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। অতি দ্রুততম সময়ে এ কাজ শুরু হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
pabnasamachar.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়