শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ১৪ ১৪৩১ ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
পাবনার খবর
প্রকাশিত: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩
মুজিববর্ষে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন, বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। এ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় ৪৩ লাখ। এবার নতুন করে সরকারে এলে দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য হ্রাসের জন্য আরও পদক্ষেপ নেয়ার অঙ্গীকার করছে দলটি।
আজ বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁওয়ে ইশতেহার ঘোষণা করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ইশতেহারে শুধু পাঁচ বছর নয়, ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ গড়ার কথাও উঠে এসেছে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ : উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’ নিয়ে স্লোগানে ইশতেহার দিচ্ছে দলটি।
এতে বলা হয়, দারিদ্র্য একটি অভিশাপ, যা জাতির মেধা ও সৃজনশীলতা বিকাশে চরম অন্তরায়। দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের সাফল্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহুল প্রশংসিত। দারিদ্র্য বিমোচনে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মূলে রয়েছে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি সহায়ক নীতি ও কৌশল এবং ব্যাপক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি। তাই দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে সরকার একদিকে ব্যক্তি খাতের বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে, অন্যদিকে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় নিশ্চিত করা হয়েছে সম্পদের সুষম পুনর্বণ্টন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘স্বাধীন দেশের মানুষ পেট ভরে খেতে পাবে, পাবে মর্যাদাপূর্ণ জীবন; তখনই শুধু এই লাখো শহীদের আত্মা তৃপ্তি পাবে।’ ২০২৩ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের উন্নয়ন ও অগ্রগতি খানা আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ ও অতি দারিদ্র্যের হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০০৫ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪০ শতাংশ ও অতি দারিদ্র্যের হার ছিল ২৫ দশমিক ১ শতাংশ। কিন্তু বর্তমানে ভোগের ভিত্তিতে বাংলাদেশে বৈষম্য শূন্য দশমিক ৩০ থেকে শূন্য দশমিক ৩২ স্থিত হয়ে আছে, যা আয় বৈষম্যের প্রভাব লাঘব করেছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ভোগ ব্যয় বৈষম্য পরিমাপে অধিকতর নির্ভরযোগ্য। অঞ্চলভিত্তিক অসমতা কমেছে, কমেছে গ্রাম ও শহরের ব্যবধান। বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না মর্মে মুজিববর্ষে ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সারাবিশ্বে শেখ হাসিনার এ ঘোষণা প্রশংসিত হয়েছে। ১৯৯৭ সাল থেকে এযাবৎ গৃহহীনদের জন্য গ্রহণ করা আশ্রয়ণ এবং অন্যান্য প্রকল্পের মাধ্যমে ৮ লাখ ৪১ হাজার ৬২৩টি পরিবারকে ঘর ও জমি দেয়া হয়েছে, যার সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৪২ লাখ ৮০ হাজারের বেশি। জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য পৃথিবীতে প্রথম বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয় মুজিববর্ষে। ১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড়ে উদ্বাস্তু পরিবার পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৪০৯টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। গৃহায়ণ তহবিল গঠন করে ঋণদানের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৪ হাজার ৬১২টি গৃহ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ছাড়াও শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের জন্য হোস্টেল এবং ছিন্নমূল পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে। ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত হয়েছে ২১টি জেলার মোট ৩৩৪টি উপজেলা। বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় কর্মসংস্থান এবং আয় বৃদ্ধির ফলে এক দিনের মজুরি দিয়ে একজন শ্রমিক ১০-১২ কেজি চাল কিনতে পারছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ প্রকৃত মজুরি। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে এক দিনের মজুরি দিয়ে ক্রয় করা যেত মাত্র ৩ থেকে ৪ কেজি চাল। চালের মূল্যের সঙ্গে তুলনা করে দেখা যায়, ১৫ বছরে প্রকৃত শ্রমিক মজুরি ৩ গুণের বেশি বেড়েছে। বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার কমে আসার এটাও অন্যতম কারণ। দারিদ্র্য বিমোচন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে আরও লক্ষ্যভিত্তিক ও সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তার খাতে মোট ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা জিডিপির ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। বর্তমানে দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য দূরীকরণে কার্যক্রমসমূহের মোট উপকারভোগীর সংখ্যা কমবেশি ১০ কোটি লোক। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ২০০৬ সালে মোট ২ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা (মোট বাজেটের ৪ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ) বরাদ্দ ছিল, বর্তমানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা (মোট বাজেটের ১৬.৫৮ শতাংশ) বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা ২০০৬ সালের তুলনায় ৫০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৬ সালে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট উপকারভোগীর সংখ্যা ছিল ২১ লাখ ৪৯ হাজার ৩৫৬ জন, যা ২০২৩ সালে ৮ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১ কোটি ৮১ লাখ ২৩ হাজার ৫৫৪ জনে দাঁড়িয়েছে। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছর থেকে বয়স্ক ভাতা কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু করা হয়, যা মাসিক ১০০ টাকা হারে দেয়া হতো। ২০০৬ সালে ১৪ লাখ ৮৫ হাজার জন বয়স্ক ভাতা পেতেন, যা ২০২৩ সালে ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৫৮ লাখ ১ হাজার জনে দাঁড়িয়েছে, যারা প্রত্যেকে মাসিক ৬০০ টাকা হারে ভাতা পাচ্ছেন। বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত ভাতাপ্রাপ্ত নারীর সংখ্যা ২০০৬ সালে ছিল ৫ লাখ ২০ হাজার জন, যা ২০২৩ সালে ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ২৬ লাখ জনে দাঁড়িয়েছে। ২০০৬ সালে প্রতিবন্ধী ভাতা পেত ৯৭ হাজার জন, যা ২৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩ সালে ২৯ লাখ ১৫ হাজার জনে দাঁড়িয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানমূলক কার্যক্রম ভিজিডি, ভিজিএফ, ভিডব্লিউবি, টিআর, জিআর, কাবিখা, কাবিটা, ইজিপিপি এবং ওএমএস-এর আওতায় ১১৪টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে উপকারভোগীর সংখ্যা ৪ কোটি ৬১ লাখ ১৫ হাজার ৭৫৬ জন। ২০০৬ সালে উপকারভোগীর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার জন, যা বর্তমানে ১০০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভিজিডি কার্যক্রমের সুবিধাভোগীর সংখ্যা ২০০৬ সালে ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার জন, যা ২০২৩ সালে ১০ লাখ ৭৭ হাজার জনে দাঁড়িয়েছে। ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ ২০ হাজার ৩২৫টি গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গঠন করে ৫৬ লাখ ৭৭ হাজার পরিবারকে উপকারভোগী হিসেবে বাছাই করা হয়েছে। ২ হাজার ৮৬ কোটি টাকা সদস্যদের নিজস্ব সঞ্চয় জমা, ২ হাজার কোটি টাকা কল্যাণ অনুদান ও ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা আবর্তক ঋণ তহবিল প্রদান এবং সমিতিগুলো ৪৯০ কোটি টাকা সেবামূল্য আদায় করেছে। অতি দারিদ্র্যপীড়িত এলাকাসহ (উত্তরাঞ্চল, উপকূলবর্তী এলাকা ও চরাঞ্চল প্রভৃতি) সারাদেশে ‘অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান’ প্রকল্পে বছরে গড়ে ১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৮ লাখ মানুষের ৮০ দিনের কর্মসংস্থান করা হচ্ছে। ৬২ লাখ ৫০ হাজার হতদরিদ্র পরিবারকে কর্মাভাবকালীন ৫ মাস ১০ টাকা দরে চাল বিতরণ করা হচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষদের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার খোলাবাজারে কম দামে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছে। ২০২২-২৩ সালে এ খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ১ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। পল্লী অঞ্চলে অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থান ও ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ২০০৮-০৯ সালে সরকার প্রকল্প চালু করে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাতে ১ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যার সুবিধা পাবে ৫ লাখ ১৮ হাজার জন। এবারের ইশতেহারে আওয়ামী লীগের অঙ্গীকার ১. দারিদ্র্য বিমোচন করে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো আওয়ামী লীগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত লক্ষ্যের অন্যতম। এই লক্ষ্য অর্জনে উচ্চতম প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা এবং সমাজে ক্রমবর্ধমান আয়বৈষম্য সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা আওয়ামী লীগের বিঘোষিত নীতি। ২. দারিদ্র্য বিমোচনের অন্যতম কৌশল হচ্ছে কৃষি ও পল্লী জীবনে গতিশীলতা। হতদরিদ্র, দুস্থ ও ছিন্নমূল মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চলমান প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী করা হবে। দেশ থেকে ভিক্ষাবৃত্তি ও ভবঘুরেপনা সম্পূর্ণ উচ্ছেদ করা হবে। ৩. ২০২৮ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ১১ শতাংশে, ২০৩১ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্যের অবসান এবং ২০৪১ সাল নাগাদ দারিদ্র্যের হার ৩ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৪. ভবিষ্যতের সেবা খাতের সহায়তায় গ্রামীণ কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিকে শিল্প ও ডিজিটাল অর্থনীতিতে রূপান্তর করা হবে। ৫. আর্থিক ও ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে সবাইকে অর্থনীতির মূলধারায় সংযুক্ত করে সব রকমের বৈষম্য দূর করা হবে।
pabnasamachar.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়