ঈশ্বরদী ইপিজেডে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব, ৩ দিনে আক্রান্ত পাঁচ শতাধিক

পাবনার ঈশ্বরদীতে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) ডায়রিয়া ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি কোম্পানির প্রায় পাঁচ শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

ইপিজেডের মেডিকেল সেন্টার ও ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা। গুরুতর কয়েকজনকে রাজশাহী ও পাবনা পাঠানো হয়েছে।

শ্রমিকরা বলছেন, ইপিজেডে সরবরাহ করা পানি পান করে ভয়াবহ এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে ইপিজেড কর্তৃপক্ষ বলছে, শ্রমিকরা তাদের জন্য রাখা নির্ধারিত বিশুদ্ধ পানি পান করেন না।

শ্রমিকরা জানান, ২৯ মে ইপিজেডে দুপুরে খাওয়ার পর থেকে পেটব্যথা, পাতলা পায়খানা, জ্বর, বমি ও মাথাব্যথায় একে একে অসুস্থ হতে শুরু করেন তারা। তাৎক্ষণিকভাবে কিছু শ্রমিক ছুটি নিয়ে চলে গেলেও পরে মধ্যরাত থেকে শুক্রবার (৩০ মে) এবং শনিবার (৩১ মে) দুপুরে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শত শত শ্রমিক ডায়রিয়াজনিত সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা নিতে ঈশ্বরদী হাসপাতাল ও ইপিজেডের মেডিকেল সেন্টারে যান। অনেকে আবার প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে যান।

শনিবার দুপুরে ঈশ্বরদী হাসপাতালে দেখা যায়, সেখানে তিল ধারণের জায়গা নেই। বেড সংকুলান না হওয়ায় স্যালাইন লাগিয়ে রোগীরা বারান্দা, করিডোরে ও সিঁড়িতে শুয়ে আছেন।

হাসপাতালের রেকর্ড সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত মোট ১১৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। কম গুরুতর আরও অনেকেই আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছেন।

এদিকে ইপিজেডের মেডিকেল সেন্টারে ২৯ মে ২৩১ জন এবং ৩১ মে দুপুর পর্যন্ত ৩৫৫ জন রোগী চিকিৎসা নেন।

ইপিজেড কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব রোগীর মধ্যে পেটব্যথা ও ডায়রিয়া ছাড়াও অন্য রোগী রয়েছেন।

রেনেসাঁ নামে একটি কোম্পানির শ্রমিক বিপুল হোসেন জানান, শুধু তাদের কোম্পানিরই প্রায় তিন শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন।

এ্যাবা কোম্পানির শ্রমিক বলেন, দুই বছর ধরে ইপিজেডে কাজ করছি। এর আগে কখনো এত শ্রমিকের ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে দেখিনি।

ইপিজেডের মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নিতে যাওয়া অস্কার বাংলা কোম্পানির শ্রমিক শ্যামলী বলেন, কোম্পানি চিকিৎসার কোনো দায়িত্ব নিচ্ছে না। যার যার ওষুধ ও স্যালাইন নিজেদের কিনতে হচ্ছে। অসুস্থতার জন্য অনুপস্থিত থাকলে হাফ বেতন দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

ইপিজেড মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক ডা. ফয়সাল হাসান বলেন, ঋতু পরিবর্তনের সময় বছরে দুবার এ রকম ঘটনা ঘটে। এটা অস্বাভাবিক নয়।

ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আলী এহসান ইপিজেডে খাবারের যে সাপ্লাই পানি রয়েছে সেখান থেকে পয়জনিং হয়েছে বলে ধারণা করছেন।

তিনি বলেন, হাসপাতালে আসা এত সংখ্যক রোগী সামাল দিতে ডাক্তার-নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। বেড না থাকায় বারান্দা, করিডোর এমনকি সিঁড়িতেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ইপিজেডে পানি ট্রিটমেন্ট করে সরবরাহের দায়িত্ব পালন করছে ঈশ্বরদী ওয়াটার সাপ্লাই লিমিটেড। তারা পদ্মা নদী এবং ডিপ টিউবওয়েলের পানি সংগ্রহ করে ট্রিটমেন্ট করে। এরপর এ পানি ইপিজেড এলাকায় সাপ্লাই দেয়। কারখানার বর্জ্যও এই কোম্পানি ট্রিটমেন্টের পর আবার পদ্মা নদীতেই পাঠিয়ে দেয়।

ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক এবিএম শহীদুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনা বিব্রতকর। ঈশ্বরদী ওয়াটার সাপ্লাই লিমিটেড ট্রিটমেন্ট করে বিভিন্ন কারখানায় পানি সাপ্লাই দেয়। এসব পানি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়াটার। প্রোডাকশনের কাজের জন্য। খাবারের জন্য কোম্পানির আলাদা ড্রিংকিং ওয়াটারের ব্যবস্থা থাকলেও শ্রমিকরা এই পানি পান করেন। এ বিষয়ে তাদের নিষেধ করা হলেও শোনেন না। এরপরও পানি সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। আক্রান্ত শ্রমিকদের সব টেস্ট ও ট্রিটমেন্ট ইপিজেড মেডিকেল সেন্টার থেকে করা হবে। আক্রান্তরা যথানিয়মে মেডিকেল লিভ পাবে। এজন্য তাদের যথাযথ কাগজপত্র দাখিল করতে হবে।