শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ৬ ১৪৩১ ১১ শাওয়াল ১৪৪৫
পাবনার খবর
প্রকাশিত: ১৫ মে ২০২১
জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী টুনি খাতুন (৪৪)। তিনি পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার গৌরিগ্রামের ঘুঘুদহ গ্রামের উজ্জল ফকিরের মেয়ে। ১০ বছর আগে মাকে হারান টুনি। মায়ের মৃত্যুর দু’বছর পরই পরাপারে পাড়ি জমান বাবাও। বছর তিনেক আগে টুনির বিয়ে হলে শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
স্বামীর তালাকের পর মাথা গোজার ঠাঁই ছিল না টুনির। পরে চাচাতো ভাইয়ের বাড়িতে একটি কক্ষ পেয়েছেন থাকার জন্য। ভিক্ষা করেই এখন দু’মুঠো খাবার জোগাড় করেন তিনি।
প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড থাকলেও নামের বানানের জটিলতায় এক বছর আগে টাকা পাওয়া বন্ধ হয়ে যায় টুনির। চেয়ারম্যান-মেম্বারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও পাত্তা দেয়নি কেউই। সমাজসেবা অফিসে গিয়ে তা সহানুভূতি মেলেনি টুনির।
টুনির কষ্টের বিষয়টি জেনে সাঁথিয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এবং সাঁথিয়া ডিগ্রি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক আব্দুদ দাঈন তাকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম জামাল আহমদের কাছে নিয়ে যান। তাতেই ভাগ্য খুলেছে প্রতিবন্ধী টুনির।
ইউএনও তার কষ্টের কথা শুনে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন। ঈদ উপলক্ষে নগদ টাকা সহায়তা ছাড়াও একটি হুইল চেয়ার দিয়েছেন। আর প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ঘর বরাদ্দ হয়েছে টুনির নামে। ঈদের দু’দিন আগে ঘর বরাদ্দ পাওয়ার খবর জেনেছেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার (১৪ মে) সাঁথিয়ার ঘুঘুদহ পূর্বপাড়া গ্রামে টুনির পৈত্রিক ভিটায় তার সঙ্গে কথা হয়। ঈদে এমন সুসংবাদ পেয়ে বেজায় খুশি ছিলেন টুনি। তিনি বলেন, ‘আমার জীবনে এতো খুশির ঈদ এর আগে কোনোদিন আসেনি।’
টুনি বলেন, আমার একটা প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড ছিল। কিন্তু কার্ডে নাকি নামের বানানে সমস্যা। এজন্য প্রায় এক বছর টাকা দেয়নি। কার্ডের সমস্যা ঠিক করতে কষ্ট করে চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছিলাম। চেয়ারম্যানের পায়ে পর্যন্ত ধরেছি। কিন্তু কাজ হয়নি। থানা গিয়ে বলেছি। পুলিশ বলেছেন ইউএনও স্যারের কাছে যেতে। আমি তো ইউএনওকে চিনি না।’
প্রতিবন্ধী এই নারী বলেন, ‘পরে সাংবাদিক আব্দুদ দাঈন স্যার আমাকে ইউএনও এর কাছে নিয়ে যান। অনেক কষ্টে দোতালায় উঠে স্যারের সঙ্গে দেখা করি। স্যার আমার সব কথা শুনেন, খুব ভাল ব্যবহার করেন। এতেই কষ্ট দূর হয়ে যায়। পরে আসার সময় নগদ টাকা দেন। ওইদিনই অফিসার ডেকে আমার ভাতা কার্ডের সমস্যা ঠিক করে দেন। হুইলচেয়ার পাচ্ছি, ঘর পাচ্ছি। আর কিছু চাই না।’
টুনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান-মেম্বার, ওসিসহ কতজনের পা ধরেছি। কিচ্ছু পাইনি। কিন্তু ইউএনও স্যারের কাছ থেকে এতো সহজে এতো কিছু পাব কল্পনাও করিনি।’
সাঁথিয়া প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আব্দুদ দাইন বলেন, রাস্তায় অসহায় টুনিকে দেখার পর তিনি ইউএনও-এর কাছে নিয়ে যান। কারণ ইউএনও সব সময় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান। টুনিকেও তিনি সহায়তা করেছেন। নগদ টাকা দিয়েছেন, ভাতা কার্ড ঠিক করে দিয়েছেন। হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করেছেন। তাকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরও দেয়ার কথা জানিয়েছেন ইউএনও।’
সাঁথিয়ার ইউএনও এস এম জামাল আহমেদ বলেন, টুনি খাতুনের দুঃখের কথা শুনে খুব কষ্ট পেয়েছি। তাকে সরকারি অনুদান দেয়া হয়েছে। তার ভাতা কার্ডেরও সমাধান করা হয়েছে। হুইলচেয়ার ও ঘর দেয়া হবে। অসহায় টুনিকে সহায়তা করতে পেরে নিজেরও আনন্দ লাগছে।’
pabnasamachar.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়