বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ১২ ১৪৩১ ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
পাবনার খবর
প্রকাশিত: ১৫ মে ২০২২
টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার নিচু এলাকার ধানখেত তলিয়ে গেছে। এসব জমির ধান পুরোপুরি পাকতে আরও ১৫ থেকে ৩০ দিন সময় লাগত বলে কৃষকেরা জানান। কিন্তু ধান তলিয়ে থাকলে পুরোপুরি নষ্ট হতে পারে, এ আশঙ্কায় আধা পাকা ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন তাঁরা। তবে শ্রমিকসংকটসহ নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য সেই ধান ঘরে তুলতেও রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে কৃষকদের।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলায় ৫ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। কৃষি কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ৫০ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে। কিন্তু কৃষকদের দেওয়া তথ্যমতে, উপজেলার করমজা, সোনাতলা, ভেদাগাড়া, ফেচুয়ান, ভিটাপাড়া, পাটগাড়ি, সরিষা, পাইকশাসহ অন্তত ২০টি গ্রামের আড়াই শ থেকে তিন শ হেক্টর জমির ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এসব জমির ধান বাধ্য হয়ে কৃষকেরা আধা পাকা অবস্থায় কেটে ফেলছেন। স্বাভাবিকের চেয়ে এসব ধানে অর্ধেক ফলন মিলবে বলে ধারণা করছেন কৃষকেরা।
করমজা মধ্যপাড়া গ্রামের কৃষক গোলজার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় ইটকাটা বিলে তিনি এবার সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছিলেন। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে এক বিঘা জমির ধান পুরোপুরি পানিতে তলিয়ে গেছে। বাকি জমি সামান্য উঁচুতে থাকলেও সেগুলোও তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে। তাই আপাতত তলিয়ে যাওয়া এক বিঘা জমির ধান কাটতে শুরু করেছেন। কিন্তু দৈনিক ৭০০ টাকা মজুরি দিয়েও তিনি ধান কাটা শ্রমিক পাচ্ছেন না। কেটে আনা ধানের প্রায় অর্ধেকই এখনো কাঁচা বলে জানান তিনি।
ফেচুয়ান গ্রামের শামীম হোসেনকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আধা পাকা ধান থেকে পাকা ধান বাছাই করতে দেখা যায়। তাঁর কেটে আনা ধানের অর্ধেকের বেশি এখনো সবুজ। শামীম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জমিতে বৃষ্টির পানি জমার পর বাতাসের কারণে দুই বিঘা জমির ধান নুয়ে পড়ে পানিতে তলিয়ে গেছে। ধান পুরোপুরি পাকতে এখনো মাসখানেক সময় লাগবে। পানিতে ডুবে ধান পচে যেতে শুরু করায় ধান কেটে ঘরে আনছেন তিনি। পরপর কয়েক দিন কড়া রোদ থাকলে এ থেকে অল্প কিছু ধান মিলতে পারে বলে ধারণা তাঁর।
আজ রোববার দুপুরে সরেজমিনে উপজেলার ভেদাগাড়া বিলে দেখা গেছে, বিলের অনেক জমির ধান পানিতে তলিয়ে আছে। পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় আরেকটু বৃষ্টি হলে পুরো বিলের ধানই তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে কৃষকেরা পানিতে ডুবে থাকা ধানের সঙ্গে উঁচু জমির আধা পাকা ধানও কাটতে শুরু করেছেন। ধান কেটে বিলের পাশে রাস্তায় এনে জড়ো করছেন। সেখানেই ধান মাড়িয়ে রোদে শুকানো হচ্ছে। বিলের পাশের পরিত্যক্ত রাস্তার বিস্তীর্ণ অংশজুড়ে অসংখ্য কৃষককে পরিবারের নারী-শিশুসহ সব সদস্যকে নিয়ে আধা পাকা ধান কেটে রোদে শুকানোর কাজ করতে দেখা যায়।
ধান শুকানোর কাজে ব্যস্ত ভেদাগাড়া গ্রামের কিষানি মনোয়ারা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাগরে জমির ধান তিন-চার দিন পানিতে তলায়া ছিল। এখন কাইট্যা আনার পর দেখা যাত্যাছে, বেশির ভাগ ধানে গাছ জালায়া গেছে। এবার আমাগরে ভাগ্যে অর্ধেক ফলনও জুটপি না।
কৃষকেরা জানান, ধান কাটার শ্রমিকসংকটের কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। শ্রমিকের অভাবে ডুবে থাকা বা বৃষ্টির ঝুঁকিতে থাকা ধান কাটতে পারছেন না। গত বছর পাঁচ শ থেকে সাড়ে পাঁচ শ টাকায় শ্রমিক পাওয়া গেলেও এবার ৭০০ টাকা (দৈনিক) দিয়েও শ্রমিক মিলছে না।
সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার গোস্বামী প্রথম আলোকে বলেন, নিচু জমিতে কৃষকেরা এবার ১৫ থেকে ২০ দিন দেরিতে ধানের আবাদ করেছিলেন। ফলে পাকতেও কিছুটা দেরি হচ্ছে। এ ছাড়া বৃষ্টিও এবার কিছুটা আগেভাগেই হানা দিয়েছে। সব মিলিয়ে ৫০ হেক্টরের মতো জমির ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এ অবস্থায় নিমজ্জিত ধান থেকে ২০ ভাগের মতো ফলন কম হতে পারে বলে তাঁদের ধারণা।
pabnasamachar.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়