শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ চৈত্র ১৪ ১৪৩০ ১৯ রমজান ১৪৪৫
পাবনার খবর
প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০২২
শীতের শুরুতে সাঁথিয়ায় লেপ-তোশকের কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন । সাঁথিয়ায় দিনে গরম আর রাতের শেষভাগে বইছে উত্তরের ঠান্ডা হাওয়া। হালকা হিমেল হাওয়া আর কুয়াশায় ঘাসে জমে থাকা শিশির বিন্দু জানান দেয় শীতের আগমনী বার্তা।
মৌসুমী শীত না পরলেও ঋতু পরিবর্তনে অনুভূত হচ্ছে শীতের আমেজ। বেঁচে থাকার জন্য ক্ষুধা নিবারণের পাশাপাশি শীত নিবারণে মানুষের সামর্থানুসারে শীতবস্ত্র ও রাতে গরম বিছানায় ঘুমানোর জন্য লেপ-তোশক, কম্বল, কাঁথা প্রভৃতি যোগার করছে।
আসন্ন শীত নিবারনে গ্রাম গঞ্জের মানুষ ভিড় করতে শুরু করেছে লেপ-তোশকের দোকানে। আগাম প্রস্তুতি হিসাবে লেপ-তোশকে সুই ফুটাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা।
পূর্ব কাল হতেই শীতে পরিবারের বিবাহযোগ্য ছেলে-মেয়েদের বিয়ের আয়োজন করা গ্রামের মানুষের প্রথাগত লোকাচারের মধ্যে অন্যতম। বর-কনে বিদায়ের সময় মেয়ের বাড়ী হতে লেপ তোশক, বালিশ সাথে না দিলে শশুরবাড়ীর লোকজনের কথা শুনতে হয় নতুন বৌকে। তাছাড়া কনে বিদায়ের সময় নতুন লেপ তোশক সাথে দেয়া গ্রাম বাংলার অতি পুরানো রীতি।
সাঁথিয়া উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা যায়, সাঁথিয়া বাজার রোড, বোয়াইলমারী বাজারসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের ছোট-বড় হাট-বাজার যেমন- কাশিনাথপুর বাজার, বনগ্রান বাজার, ধুলাউড়ি ও ডেমড়া বাজার, মাধপুর ও আতাইকুলা বাজার, জোড়গাছা ও নন্দনপুর বাজার, সিএন্ডবি বাসস্ট্যান্ড বাজার, গৌরিগ্রাম বাজারে লেপ-তোশক বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। দোকানের সামনে বড় মাদুর কিংবা চাটাই পেতে তার উপরে মাপের কাপর বিছিয়ে প্রয়োজনমত তুলা দিয়ে শুরু হয় সুই ফুটিয়ে সেলাইয়ের কাজ। এক থেকে দেড় ঘন্টার মধ্যে তৈরী হয়ে যায় একটি লেপ কিংবা তোশক। এভাবে একটার পর একটা অর্ডার করা লেপ-তোশক তৈরী করে ক্রেতাদের সরবরাহ করেন দোকানিরা।
সাঁথিয়া বাজারের ভাই-ভাই বেডশোপের স্বত্তাধিকারী রাকিব হোসনে জানান, লেপ-তোশক তৈরী করা তাদের দুই পুরুষের পেশা। পিতা আসলাম হোসেন খাজার অবর্তমানে সংসারের হাল ধরতে হয় অল্প বয়সে।
২০১৩ সালে বাবার মৃত্যুর পর আমাকে এ পেশায় নামতে হয়েছে। তখন কলেজে পরতাম কিন্তু পরিবারের সদস্যদের অভাব ঘোচাতে আমি পৈতৃক ব্যবসার হাল ধরি। মৌসুম ছাড়া বছরের প্রায় প্রতি মাসেই ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করে থাকি এই লেপ-তোশক তৈরি করে।
শীতের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে অনেকেই নতুন লেপ-তোশকের অগ্রিম অর্ডার দিয়ে যাচ্ছেন। সারা বছরই টুকি টাকি লেপ-তোশক সেলাই করে থাকি, তবে শীত পড়লে কাজের চাপ বেড়ে যায় অনেক। তখন অতিরিক্ত শ্রমিক দিয়ে কাজ করাতে হয়। সাইজ অনুযায়ী ‘প্রতিটি লেপ ও তোশক তৈরিতে তারা মুজরি পান ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। সেলাই অনেক সময় আমি নিজে করি অথবা একই নিয়মে মজুরি দিয়ে থাকি । দিন শেষে একেক জনের ৮ -৯ শত টাকার মতো রোজগার হয়। তা দিয়ে সংসার চালান তারা। তবে বাজারে জিনিস পত্রের দাম বেশি হওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় আজকাল।
তিনি আরো জানান, আমরা গার্মেন্টস থেকে পরিত্যক্ত জুট কিনে স্থানীয় ভাবে তুলা তৈরি করে বিক্রি করে থাকি। এই তুলা ৫০ থেকে ৯০ টাকা বিক্রি করি। শিমুল তুলা প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, সাদা তুলা ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, সব মিলিয়ে ভালো মানের একটি লেপ তৈরি করতে ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকার মতো খরচ হয়। একই মানের একটি জাজিমে খরচ আসে ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা।
pabnasamachar.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়