শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ১৩ ১৪৩১ ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
পাবনার খবর
প্রকাশিত: ১৮ মে ২০২২
পাবনার ভাঙ্গুড়ায় নির্দেশনা উপেক্ষা করে চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকদের কাছে থেকে জোর করে চাষের এক-চতুর্থাংশ ধান আদায় করার অভিযোগ উঠেছে সেচপাম্প মালিকদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় পর্যায়ে সেচপাম্প মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন প্রান্তিক কৃষকরা। সর্বশেষ সরকারি নির্দেশ রয়েছে পাম্পমালিকের বিঘাপ্রতি আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা আদায় করতে পারবেন। ফলে সার বুজের বাড়তি মূল্যে ধান আবাদ করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কৃষি বিভাগের পানাসি (পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ) প্রকল্পে উপজেলায় ২৫টি পাম্পের মধ্যে ২০টি এবং ব্যক্তিপর্যায়ে অসংখ্য পাম্প চলমান রয়েছে। এর আওতায় উপজেলায় প্রায় ৬০০ হেক্টর জমি ধান আবাদ হয়েছে। সরকার কৃষকদের সুবিধা দিতে এসব প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা ছাড়াও সরাসরি যান্ত্রিক সুবিধা প্রদান করে থাকে।
ধান আবাদ শেষে ফসল তোলার সময় নিয়মানুযায়ী কৃষক জমির ধরন অনুযায়ী নগদ আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা বা ধানের এক-পঞ্চমাংশ ধান জমিতে রেখে দেবেন। পাম্প কর্তৃপক্ষ সেই ধান নিজে জমি থেকে সংগ্রহ করবেন।
কিন্তু বাস্তবতায় পাম্পমালিকরা জোর করে ভয়ভীতি দেখিয়ে ও আগামী মৌসুমে জমিতে সেচ দেওয়া হবে না বলে ধানের এক-চতুর্থাংশ আদায় করছেন। ফলে আগামী মৌসুমে ধান আবাদের নিশ্চয়তা পেতে এ অন্যায় মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকেরা। আর এভাবেই চলছে বছরের পর বছর।
পাম্পমালিকরা এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় ও ভোটের রাজনীতির কারণে অসহায় হয়ে পড়েছেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও। কারও কথারই তোয়াক্কা করছেন না পাম্পমালিকরা।
উপজেলার খান-মরিচ ইউনিয়নের কৃষক বাসেদ আলী বলেন, কৃষকদের আর কি করার আছে চার ভাগে ভাগ না দিলে সামনের আবাদে পানি পাবো না। এখন সবাই খোঁজখবর নিচ্ছে হয়তো পাঁচ ভাগে ভাগ দেওয়া যাবে; কিন্তু আগামী আবাদে কাউকেই খুঁজে পাবো না। ঝামেলা করে কি লাভ তাদের (পাম্পমালিক) সঙ্গে কি কৃষকরা পারবে।
আরেক কৃষক কোরবান মোল্লা বলেন, এই সিদ্ধান্ত (এক পঞ্চমাংশ) বাস্তবায়ন হলে কৃষক স্কিমের মালিক সবারই ভালো হয়। আমাদের সার বীজের সঙ্গে তাদের (পাম্পমালিক) কারেন্ট (বিদ্যুৎ) ডিজেলের দাম বাড়ছে।
পাম্পমালিক কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাম্পের অনুমোদন নিতে হয়রানি, ঘুষ অধিক টাকা খরচ, দেখভালের জন্য রাখা লোকের বেতন, বিদ্যুৎ বিল, ডিজেলের জন্য অনেক টাকা খরচ হয়ে বিঘাপ্রতি তিন হাজার টাকার উপরে চলে যায়। আর বিঘাপ্রতি ধান পাওয়া যায় ফলন অনুযায়ী তিন থেকে চার মণ, যা বাজার দরে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। কৃষকদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ নেই। আগামীতে আর সমস্যা হবে না।
এ বিষয়ে বিএডিসি-পানাসি সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের ভাঙ্গুড়া অফিসের উপসহকারী মো. ইয়াকুব আলী বলেন, সর্বশেষ আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে হিসাব করে দেখা গেছে আবাদী ধানের এক-পঞ্চমাংশ পরিমাণে দেওয়া হলে কৃষক ও পাম্পমালিকের সবাই স্বার্থরক্ষা হয়। ফলে এ সিদ্ধান্ত কৃষক ও পাম্পমালিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ে কাজ করা হচ্ছে।
উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান জানান, কৃষকদের ও পাম্পমালিকদের উভয়দের কে এক-পঞ্চমাংশ ধান দেয়া এবং নেওয়ার বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। উপজেলার বৃহদাংশে এভাবেই চলছে তবে বিচ্ছিন্ন কিছু জায়গায় জটিতলা সৃষ্টি হয়েছে সেসব জায়গায় আমি নিজে এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সমাধান করা হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
pabnasamachar.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়