শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ১৩ ১৪৩১ ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
পাবনার খবর
প্রকাশিত: ৮ জুন ২০২১
পাবনার বেড়া উপজেলায় যমুনা নদী থেকে বালি তুলে পুকুর ভরাটের কাজ দেখতে গিয়ে নিখোঁজ শিশু আসাদুল্লাহ (৬) ২৪ ঘন্টা পড়েও উদ্ধার হয়নি। সোমবার শিশুটি পুকুর ভরাটের বালুর নিচে চাপা পড়েছে বলে স্থানীয়র আশঙ্কা করলেও, দীর্ঘ চেষ্টায় তাকে পাওয়া যায় নি।
গতকাল সোমবার দুপুর বারোটা থেকে মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত নিখোঁজ হওয়া শিশুটিকে উদ্ধারে বালি সরিয়ে চেষ্টা চালিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ।
সোমবার (৭ জুন) সকালের দিকে উপজেলার নতুন পেঁচাকোলা গ্রামে নিখোঁজের ঘটনাটি ঘটে। নিখোঁজ শিশুটি উপজেলার হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের নতুন পেঁচাকোলা গ্রামের মো. আযম আলীর ছেলে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, যমুনা নদীর তীরবর্তী পেঁচাকোলা গ্রামের একটি পুকুর ভরাটের জন্য বেশ কয়েকদিন ধরে বালু ফেলার কাজ চলছিল। পুকুরটি নতুন পেঁচাকোলা গ্রামের অন্তত ১৫ জনের মালিকানাধীন বলে জানা গেছে। পুকুর ভরাটের জন্য যমুনা নদী থেকে খননযন্ত্রের মাধ্যমে বাল্কহেডে বালু তুলে তীরে নিয়ে আসা হয়।
এরপর সেই বাল্কহেড থেকে পাইপের মাধ্যমে পানিসহ বালু পুকুরে ফেলা হচ্ছিল। পাইপের মাধ্যমে যে স্থানে বালু ফেলা হচ্ছিল সেই স্থানটি বালু মেশানো পানিতে ভরে থাকলেও সেটি বেশ গভীর এবং সেখানে যে কারো ডুবে যাওয়ার কথা।
এলাকাবাসী ও নিখোঁজ শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার পর থেকে শিশুপুত্র আসাদুল্লাহকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। শিশুটির পরিবারের লোকজন বিভিন্ন স্থানে তাকে খোঁজাখুঁজি করছিল।
এক পর্যায়ে আসাদুল্লাহর খেলার সঙ্গী ও প্রতিবেশী সোহাগ (৬) নামের আরেকটি শিশু জানায়, সকাল ৮টার দিকে আসাদুল্লাহ ও সে ওই স্থানে বসে পাইপের মাধ্যমে বালু ও পানি পড়া দেখছিল।
এক সময় প্রতিবেশী সোহাগ বাড়ি চলে গেলেও আসাদুল্লাহ ঘটনাস্থলেই বসে থাকে। এর পর থেকে তাকে আর পাওয়া যাচ্ছিল না। এতে অনেকেই ধারণা করছেন শিশুটি দুর্ঘটনাবশত পানি মেশানো বালুর মধ্যে পড়ে ডুবে গিয়ে থাকতে পারে।
এরপর স্বজনেরা বালু পড়ার ওই স্থানে শিশুটিকে খোঁজাখুজি করতে থাকেন। তাঁরা ব্যর্থ হওয়ার পর বেড়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা কোদাল, বেলচা প্রভৃতির সাহায্যে ঘন্টা দুয়েক বালু সরিয়ে শিশুটির খোঁজ পায়নি।
শেষে সন্ধায় থেকে রাত একটা পর্যন্ত এবং পরদিন অথাৎ মঙ্গবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ভেকু মেশিনের সাহায্যে ঐ স্থানের দুইটি পুকুরের বালু সরিয়ে শিশুটিকে খোঁজা হয়। দুপুর আড়াইটার পর থেকে উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়।
এলাকাবাসী আরও জানান, যমুনা নদী থেকে বালু তোলা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। এর আগে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের কারণে বালু তোলা প্রায় বন্ধ ছিল। কিন্তু প্রশাসনের নজরদারি কমে যাওয়ার সুযোগে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
হাটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের নের্তৃত্বে একটি চক্র নদী থেকে অবৈধ বালি উত্তোলন করে। কোন নিরপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই বালি উত্তোলন করে আসছে। নদী ভাঙন ও পরিবেশের বিপর্যয়ের পাশাপাশি প্রায়ই দূর্ঘটনা ঘটে।
এ ব্যাপারে বেড়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অরবিন্দ সরকারের জানান, ‘সোমবার দুপুর থেকেই শিশুটিকে খুঁজে বের করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি। উদ্ধার কাজে যত ররকম কৌশল প্রয়োগ করা দরকার থানা পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের সহোযোগিতায় তা আমরা করছি।
তবে ধারণা করা হচ্ছে ছেলেটি এখানে নেই। নদীর তীরবর্তী হওয়ায় নৌকায় মাইক নিয়ে নদীতে ছেলেটিকে খোঁজা হচ্ছে। শিশুটিকে খুঁজে বেড় করার জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বালু ফেলার কাজে ব্যবহৃত জব্দকৃত বাল্কহেড ও পাইপ থানায় আনা হয়েছে।’
pabnasamachar.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়