শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ৭ ১৪৩১ ১১ শাওয়াল ১৪৪৫
পাবনার খবর
প্রকাশিত: ১২ জুন ২০২২
বাদশা আলম (৪০)। পাবনার বেড়া উপজেলা সদর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি একজন তাঁতশ্রমিক। নামে যেমন বাদশা, মনেও তিনি বাদশা।
সবসময় তার মনে উঁকি দেয় কী করে মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়। এজন্য তিনি ভাঙাচোরা একটি সাইকেল নিয়ে প্রায়ই বেরিয়ে পড়েন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। সাইকেলের সামনে ও পেছনে মানুষকে সচেতন করার জন্য লেখা থাকে বিভিন্ন স্লোগান।
সাইকেলের হ্যান্ডেল ও তার নিজের গলায় ঝোলানো থাকে বিভিন্ন সবজি-বীজভর্তি বোতল। পতিত জমি রয়েছে এমন পরিবারের মানুষের কাছে সেই বীজ বিনামূল্যে বিতরণ করেন। কীভাবে বীজ বপন করতে হয় তা-ও শিখিয়ে দেন। কখনো কখনো নিজের খরচে বাল্যবিবাহ ও যৌতুকবিরোধী লিফলেট ছাপিয়ে বিভিন্ন এলাকায় বিতরণ করেন। এজন্য ইতোমধ্যেই তিনি মানুষের কাছে পরিচিতি পেয়েছেন ‘সাইকেল বাদশা’ নামে।
পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই বাদশা অন্যদের চেয়ে আলাদা। গ্রামের কেউ কোনো বিপদে পড়লে সবার আগে ছুটে যাওয়া তার নেশা। কাউকে হাসপাতালে নিতে হলে, ওষুধ কিনে আনার দরকার হলে বা বাজার থেকে জরুরি কোনো জিনিসের প্রয়োজন হলে ছুটে গিয়ে তা করে দেন বাদশা।
তিনি নিজেই ছন্দ মিলিয়ে সমাজ সচেতনতামূলক নানা স্লোগান লিখে গ্রামের বিভিন্ন স্থানে সেঁটে দিতে থাকেন। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এর পরিধি। এরপর আর্টিস্ট দিয়ে টিনের ওপর সাইনবোর্ড আকারে বাল্যবিবাহ, যৌতুক ও মাদকবিরোধীসহ সচেতনতামূলক নানা স্লোগান লিখিয়ে গ্রামের বাইরেও সাঁটতে শুরু করেন।
বছর দশেক আগে একটি সাইকেল কিনে তাতেই শুরু করেন মানুষকে সচেতন করার প্রচারণা। আর সেই প্রচারণার সঙ্গে সবজির বীজ বিতরণের কর্মকাণ্ডটি যুক্ত হয়েছে পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে। ওই সময় থেকে তিনি বিনামূল্যে বিভিন্ন এলাকায় বীজ বিতরণ করে আসছেন।
বিনামূল্যে বীজ বিতরণের জন্য এলাকার সবজি চাষির অনেকেই তাকে ভালোবাসেন। চাষিদের অনেকেই বাদশার বিনামূল্যে বীজ বিতরণের কথা জানেন। তারাই বীজ উৎপাদনের সময় বাদশার জন্যও বেশি করে করেন। সেখান থেকেই বিনামূল্যে মেলে বীজ। এরপর সেই বীজ প্লাস্টিকের বিভিন্ন বোতলে ভরে অবসর সময়ে তিনি বেরিয়ে পড়েন বিতরণ করতে। গত পাঁচ-ছয় বছরে তিনি বেড়ার অর্ধশতাধিক গ্রামের কয়েকশ বাড়িতে বীজ বিতরণ করেছেন। তিনি সবাইকে শিখিয়ে দেন কী করে কোন জায়গায় বীজ বপন করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
কখনো কখনো তিনি নিজেই বিভিন্ন বাড়ির পতিত জায়গা খুঁজে বীজ বপন করেন। বাদশা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। ইচ্ছা থাকলেও দরিদ্রতার জন্য তিনি বেশি দূর এগোতে পারেননি। তিনি দুই সন্তানের জনক। তাঁতশ্রমিকের কাজ করে প্রতিদিন আয় করেন গড়ে ৩০০ টাকা।
বাদশা বলেন, ‘প্রতি মঙ্গলবার আমার তাঁত বন্ধ থাকে। আর এই সুযোগে প্রতি মঙ্গলবার সাইকেল আর বীজ নিয়ে বের হই। তবে সপ্তাহের অন্য কোনো দিন তাঁত বন্ধ থাকলে সেদিনও বের হন।
বাদশার ব্যাপারে কথা হয় নাকালিয়া আনোয়ারা কাদের বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক বশির আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাদশা তার সীমিত সামর্থ্য দিয়ে সমাজ পরিবর্তনে অসামান্য ভূমিকা রাখছেন। তার অবদানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সবুজে ভরে উঠছে।’
pabnasamachar.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়