শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ১২ ১৪৩১ ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
পাবনার খবর
প্রকাশিত: ৪ জুন ২০২২
পদ্মা ও যমুনার চরে নীরব বিপ্লব ঘটিয়ে চলেছেন নদীভাঙা মানুষরা। এক সময় যে নদী ছিল তাদের দুঃখের কারণ, সে নদীর বুকে জেগে ওঠা চরই এখন তাদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। ভাঙনকবলিত মানুষ ফলাচ্ছেন বিভিন্ন ধরনের ফসল। এর সঙ্গে গড়ে তুলেছেন ছোট ছোট গো-খামার। এসব খামারের দুধ, মাংস বদলে দিচ্ছে তাদের ভাগ্য।
জানা যায়, নদীভাঙনে নিঃস্ব শতশত পরিবার বেড়ার পদ্মা-যমুনার বুকে জেগে ওঠা চরে বসতি গড়ে তোলেন। তাদেরই এক জন আলম প্রামাণিক বেড়া উপজেলার চরনাকালিয়া গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নেন। অন্যের জমিতে কামলা খেটে ও বর্গাচাষি হিসেবে কাজ করে কোনো রকমে সংসার চালাতেন। এক বেলা খাবার জুটলেও আরেক বেলা জুটত না।
১৫ বছর আগে আলম প্রামাণিকের অবস্থা ছিল এ রকম। কিন্তু আজ তার ঘরবাড়ি, জমিজমা সব হয়েছে। এলাকায় তিনি এখন অন্যতম এক জন সচ্ছল মানুষ। এই কয়েক বছরে সব মিলিয়ে তার সম্পদের পরিমাণ অন্তত ১০ লাখ টাকা। কোন আলাদিনের চেরাগের বদৌলতে তার ভাগ্যের এ পরিবর্তন?
এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমার ভাগ্য বদলায়া দিছে গরু। এনজিওর ঋণ কইর্যা দুইড্রা বকনা বাছুর কিনছিলাম। আইজ আমার গোয়ালে ছয়ডা গাভি। দৈনিক দেড় মণ দুধ পাই। এহন গরু পালনই আমার একমাত্র পেশা।’ পদ্মা-যমুনার চরাঞ্চলে গেলে আলম প্রামাণিকের মতো ভাগ্য বদলের এমন গল্প এখন ঘরে ঘরে শুনতে পাওয়া যায়।
চরের বাসিন্দা ও নাকালিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বশির মিয়া জানান, ১৫ বছর আগেও চরে এত গরু ছিল না। ঐ সময় শুধু হাতেগোনা কিছু গৃহস্থ উন্নতজাতের গাভি পালন করত। কেউ কেউ ষাঁড় বাছুর কিনে এনেও পালন করতেন।
কিন্তু গাভির দুধ থেকে ভালো আয় আর গরু মোটাতাজা করা থেকে ব্যাপক লাভ করতে দেখে গরু পালনে আগ্রহীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে। এভাবে এখন চরের প্রায় সব বাড়িতেই গড়ে উঠেছে গরুর খামার। তিনি আরো বলেন, গরু পালনে চরের অন্তত ৯০ শতাংশ মানুষের ভাগ্য বদলে গেছে।
বেড়া উপজেলার চরনাকালিয়া গ্রামের আওলাদ হোসেন জানান, মূল এলাকায় সারা বছর গোখাদ্য কিনে গরুগুলোকে খাওয়াতে হয়। সেখানে কাঁচা ঘাস কম পাওয়া যায় বলে খড়-ভুসির ওপর গরু পালনকারীদের বেশি নির্ভরশীল থাকতে হয়। কিন্তু চরে এর ঠিক উলটো অবস্থা। বর্ষা মৌসুমের মাস চারেক ছাড়া বাকি প্রায় আট মাস চরে পাওয়া যায় প্রচুর কাঁচা ঘাস।
আর এই ঘাস চরবাসী সংগ্রহ করেন এক রকম বিনামূল্যেই। ফলে গরু পালনের বার্ষিক খরচ তুলনায় আনলে চরবাসীর খরচ সমতল এলাকার পালনকারীদের তুলনায় প্রায় অর্ধেকেরও কম। এর ওপর চরবাসী কাঁচা ঘাস বেশি খাওয়ান বলে তাদের গাভিগুলোর দুধ দেওয়ার ক্ষমতা সমতল এলাকার গাভির চেয়ে বেশি।
এ বিষয়ে বেড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা স্বর্ণালী জাহান পান্না বলেন,গরু পালন করে চরের মানুষ গত একযুগে যে সাফল্য পেয়েছে তা সত্যিই বিস্ময়কর। উপজেলার চরগুলোর মধ্যে চরনাকালিয়া, চরনাগদা, দক্ষিণ চরপেঁচাকোলাসহ অন্তত ২৫টি চরে বলা চলে গরু পালনে বিপ্লব ঘটে গেছে।
pabnasamachar.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়