মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ১০ ১৪৩১ ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
পাবনার খবর
প্রকাশিত: ২০ নভেম্বর ২০২২
স্টেশনে দাঁড়াতেই কানে ভেসে এল বাঁশির করুণ সুর। সেই সুরের টানে এগিয়ে গিয়ে স্টেশনের পাশের চায়ের দোকানে দেখা মিলল এক বৃদ্ধের। তিনি বাঁশিতে সুর তুলছিলেন। মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করছিলেন কিছু মানুষ। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে থেমে যায় বাঁশি। দোকান থেকে বেড়িয়ে হাঁটতে শুরু করেন বৃদ্ধ।
পাবনার ঈশ্বরদী জংশনের স্টেশন এলাকায় গত বৃহস্পতিবার এই বংশীবাদকের দেখা মেলে। পিছু নিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। নাম রহমত আলী। বয়স ৮০ বছর। বাড়ি উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামে।
একসময় দাশুড়িয়া স্টেশনের পাশে চা বিক্রি করতেন রহমত আলী। পাশাপাশি চায়ের দোকানে বাঁশি বিক্রি করতেন। এতে ভালোই চলত স্বামী-স্ত্রীর সংসার। করোনাকালে দোকানটি বন্ধ হয়ে যায়। এখন তাই ফেরি করে বাঁশি বিক্রি করেন। বাঁশির সুরে মানুষকে মুগ্ধ করেন। কিন্তু এতে সংসার চলছে না রহমত আলীর। তাই বিষাদ-বিষণ্নতায় দিন কাটছে মানুষটির।
আত্মার সাথে বাঁশির সুর মিশে গেছে। আত্মা যেদিন থাকপিনে, সেদিন সুরও থামি যাবি।
রহমত আলী
কথায় কথায় রহমত আলী জানান, বাবা ছিলেন দরিদ্র কৃষক। তাই কৈশোর থেকে বাবার সঙ্গে সংসারের হাল ধরতে হয়। পরে তিনিও চার সন্তানের বাবা হন। কিন্তু সন্তানেরা কাছে নেই। বিয়ে করে সবাই বাড়ি ছেড়েছেন। এখন স্ত্রী আর তিনি মিলে দুজনের সংসার। যা আয় করেন, তা দিয়ে চলতে হয়। চায়ের দোকানটি থাকাকালে তেমন একটা সমস্যা ছিল না। করোনার সময় দোকান বন্ধ রাখায় জায়গাটি বেদখল হয়ে গেছে। তাই এখন হাটবাজারে ঘুরে এবং ট্রেনে ফেরি করে বাঁশি বিক্রি করেন।
রহমত আলীর ভাষ্যমতে, ৫০ বছর বয়সে শখ করে বাঁশি বাজানো শিখেছিলেন। এখন এই শখের বাঁশিই তাঁর জীবন-জীবিকা রক্ষা করছে। তবে বাঁশি কেনার তেমন মানুষ নেই। সারা দিন ঘুরে যে কয়টি বাঁশি বিক্রি করেন, তাতে ৭০–৮০ টাকা আয় হয়। তা দিয়ে সংসার চলে না। বাজারে সব জিনিসের দাম বেড়েছে। একটি কিনলে আরেকটি কেনার টাকা থাকে না। তাই প্রায়ই স্বামী-স্ত্রীকে একবেলা খেয়ে অন্যবেলা না খেয়ে কাটাতে হয়। এর মধ্যে আবার দুজনের ওষুধের খরচ আছে। সব মিলিয়ে তিনি কুলিয়ে উঠতে পারছেন না।
রহমত আলী আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘বাড়িত একটা ভাঙাচোরা ঘরে দুইজন থাহি। ছাওয়ালরাও খোঁজ লেয় না। গিরামের সগলেই আমাগের দুরবস্থার কথা জানে। তাউ এই বয়সে একখান বয়স্ক ভাতার কার্ড কপালে জোটেনাই। নিজি যা কমাই করি, তা–ই দিয়ে খায়া না খায়া চলি। মেলা কষ্টর মধ্যিউ বাঁশিত সুর তুলে পরান জুড়েই। বাঁশি শুনে মানুষ আনন্দ পায়, ইডাই এহন আমার আনন্দ।’
কত দিন পথে পথে ঘুরে এভাবে বাঁশি বাজাবেন—এমন প্রশ্নের জাবাবে রহমত আলী বলেন, ‘আত্মার সাথে বাঁশির সুর মিশে গেছে। আত্মা যেদিন থাকপিনে, সেদিন সুরও থামি যাবি।’
ঈশ্বরদী স্টেশন বাজারের চায়ের দোকানদার সুমন হোসেন বলেন, প্রায়ই রহমত আলী তাঁর দোকানে আসেন। কোনো দিন দুটি বিস্কুট, কোনো দিন পাউরুটি খেয়ে দুপুর পার করেন। তবে তিনি বাঁশি বাজিয়ে মানুষকে মুগ্ধ করতে পারেন। তিনি এলেই সবাই তাঁর বাঁশি শোনেন। অনেকে খুশি হয়ে তাঁর বাঁশি কেনেন।
রহমত আলীর বিষয়ে জানতে দাশুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম সরদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রহমত আলীর বিষয়ে কিছুদিন আগে তিনি জানতে পেরেছেন। ভবিষ্যতে তাঁর জন্য একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ছাড়া অন্য কোনোভাবে সহযোগিতা করা গেলে, সেটাও করার চেষ্টা করবেন।
pabnasamachar.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়