সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ১৬ ১৪৩১ ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
পাবনার খবর
প্রকাশিত: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
পাবনার ঈশ্বরদীর চরমিরকামারি গ্রাম। ৩১ বছর আগে ১৯৯৩ সালে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এ গ্রামের মানুষ গড়ে তোলেন ‘ভাষা শহীদ বিদ্যানিকেতন’। প্রতিষ্ঠানটি ব্যতিক্রমী এ কারণেই, এখানে ফেব্রুয়ারি এলে প্রতিদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয় ভাষাশহীদদের। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে এই বিদ্যালয়ের মাঠে তৈরি করা হয়েছে একটি শহীদ মিনার। ২১ ফেব্রুয়ারি শ্রদ্ধার ফুলে ভরে যায় এর প্রাঙ্গণ।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোক্তার হোসেন জানান, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রয়াত লুৎফর রহমানের সঙ্গে সখ্য ছিল প্রয়াত ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের। সে সময় ড. আনিসুজ্জামান ও লুৎফর রহমান মিলে প্রস্তাব করেন– এই স্কুলের নাম হবে ‘ভাষা শহীদ বিদ্যানিকেতন’। তাদের প্রস্তাবে সর্বসম্মতভাবে ঠিক হয় স্কুলটির নাম।
এলাকাবাসী জানান, ফেব্রুয়ারির প্রতিদিনই তাদের কাছে একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবসের মতো। কারণ এই মাসের প্রথম দিন থেকে এ স্কুলের শিক্ষার্থীরা ভাষাশহীদদের স্মরণ করে। তাদের প্রতি আনুষ্ঠানিক শ্রদ্ধা জানায়। মাসজুড়ে থাকে নানা আয়োজন। ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শিক্ষা ও ভাষা আন্দোলনের খুঁটিনাটি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের বিশেষ ক্লাস নেওয়া হয়।
এই স্কুলের লাইব্রেরিতে অন্যান্য বইয়ের পাশাপাশি রয়েছে ভাষা আন্দোলনের অনেক বই। প্রধান শিক্ষক মোক্তার হোসেন বলেন, ‘জানুয়ারি থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে একুশে ফেব্রুয়ারি পালনের প্রস্তুতি শুরু হয়।’
স্থানীয়রা জানান, ১৯৯৩ সালে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ‘চরমিরকামারি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ চালু হয়। পরে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘ভাষা শহীদ বিদ্যানিকেতন’। স্কুলের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে রয়েছেন লুৎফর রহমান, আব্দুস সামাদ সরদার, আব্দুল আজিজ, জামাত আলী, এমদাদুল হক, কালাম সরদার, আব্দুস সবুর মাস্টার প্রমুখ।
অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত আব্দুস সবুর মাস্টারের ছেলে জালাল উদ্দিন তুহিন তাঁর বাবার স্মৃতি ধরে রাখতে স্কুলে তৈরি করে দিয়েছেন ‘আব্দুস সবুর স্মৃতি গ্রন্থাগার’। সেখানে রয়েছে কয়েক হাজার বই, ২৩টি কম্পিউটার, আইসিটি ল্যাব, মুক্তিযোদ্ধা কর্নার ও ভাষাশহীদদের ছবি। আরেক প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ সরদারের সন্তানেরা তৈরি করে দিয়েছেন বিদ্যালয়ের সুদৃশ্য তোরণ। এ ছাড়া এই গ্রামের সন্তান প্রয়াত সাংবাদিক বেনজির আহমেদ তৈরি করে দিয়েছেন একটি সায়েন্স ল্যাবরেটরি।
প্রধান শিক্ষক মোক্তার হোসেন বলেন, ‘দেড়শ ছাত্রছাত্রী নিয়ে শুরু করা এই স্কুলে এখন শিক্ষার্থী ৭০০। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিক্ষা বিস্তারে অনবদ্য ভূমিকা পালন করছে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।’
ঈশ্বরদী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ভাষা শহীদ বিদ্যানিকেতন অন্যান্য স্কুলের চেয়ে আলাদা। এখানে বাংলা ভাষা ও ভাষাশহীদদের প্রতি যেভাবে ভালোবাসা দেখানো হয়, তা অনুসরণীয়।’
pabnasamachar.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়