শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ১৩ ১৪৩১ ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
পাবনার খবর
প্রকাশিত: ৬ মার্চ ২০২৩
তার ঝুলিতে স্কুল ও জাতীয় পর্যায়ে অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতার স্বর্ণ ও রৌপ্য পদক। এবছর অর্জন করেছেন দৌঁড় ও দীর্ঘ লাফে জেলা, বিভাগ এবং অঞ্চল পর্যায়ে স্বর্ণ, রৌপ্য এবং ব্রোঞ্জ পদক। সর্বশেষ বিকেএসপিতে (বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) চূড়ান্ত ভর্তি পরীক্ষায় দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন।
এমনই একজন সফল ও উদীয়মান অ্যাথলেটের নাম সুবর্না খাতুন। কিন্তু এতসব অর্জনের মাঝেও তার পরিবারের ওপর ভর করেছে বিষাদ আর হতাশার ছায়া। কারণ, অর্থের অভাবে সুযোগ পেয়েও বিকেএসপিতে ভর্তি হতে পারছেন না সুবর্না। দরিদ্র ভ্যানচালক বাবার পক্ষে তার ভর্তির টাকা যোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না।
সুবর্নার ভর্তি হতে প্রয়োজন ২৩ হাজার টাকা। আর ভর্তি ফি সহ সব টাকা জমা দেওয়ার শেষদিন ৯ মার্চ।
সুবর্নার বাড়ি পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার নাগডেমরা ইউনিয়নের ফেঁচুয়ান গ্রামে। সোনাতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এই শিক্ষার্থী রাসেল শেখ ও সালমা খাতুন দম্পতির মেয়ে।
সুবর্নার অটোভ্যানচালক বাবার বাড়ির চার শতক জমি ছাড়া আর কোনো জায়গা জমি নেই। তিন বোনসহ পাঁচ সদস্যের পরিবার তাদের। পরিবারের খরচ বহন করে সুবর্নার ভর্তির টাকা দিতে পারছেন না অসহায় বাবা।
পারিবারিক ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সুবর্না ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ২০২১ সালে পাবনা জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত বার্ষিক অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় ১০০ ও ২০০ মিটার এবং রশি দৌঁড়ে প্রথম স্থান অর্জন করে। এরপর ২০২২ সালে জেলা, উপজেলা, উপ-অঞ্চলে (আট জেলা) দীর্ঘ লাফে প্রথম এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে দৌঁড়ে প্রথম স্থান অর্জন করে। পরে জাতীয় পর্যায়ে দিনাজপুর স্টেডিয়ামে ২০০ মিটার দৌঁড়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করে ব্রোঞ্জ পদক পায়।
এ বছর উপজেলা, জেলা, উপ-অঞ্চল ও অঞ্চল পর্যায়ে ১০০ এবং ২০০ মিটার দৌঁড় ও দীর্ঘ লাফে এবং রিলে দৌঁড়ে প্রথম স্থান অর্জন করে চ্যাম্পিয়ন হয় সুবর্না।
এছাড়া জাতীয় পর্যায়ে যশোরে রিলে দৌঁড়ে প্রথম স্থান অর্জন করে স্বর্ণপদক পায় এবং দীর্ঘ লাফে রৌপ্যপদক এবং দৌঁড়ে ব্রোঞ্জপদক পায়।
এ বছরের গত ৩১ জানুয়ারি বিকেএসপিতে অ্যাথলেটিকস বিভাগে চূড়ান্ত ভর্তি পরীক্ষায় বালিকা বিভাগ থেকে দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করার গৌরব অর্জন করে সুবর্না। এছাড়া শেখ কামাল অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে।
সুবর্না বলেন, ‘আমার স্বপ্ন আমি বাংলাদেশের দ্রুততম মানবী হতে চাই এবং অলিম্পিক গেমস এ স্বর্ণ পদক জয় করে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে উচ্চ শিখরে তুলে ধরতে চাই।'
সুবর্নার প্রশিক্ষক এবং ওই বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক এনামুল হক বলেন, ‘সুবর্না এমনই একটি মেয়ে যার ইচ্ছা শক্তি প্রবল। তার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য সে কঠোর পরিশ্রম করতে দ্বিধাবোধ করেনা। তার পাশ দাঁড়ালে সে একদিন দেশের সম্পদ হয় উঠবে।'
সোনাতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ গোলাম মওলা বলেন, ‘সুবর্না আমার বিদ্যালয়ের একজন গরীব ও মেধাবী ছাত্রী। সে যদি অনুশীলনের ধারা অব্যাহত রাখে এবং বিকেএসপি ভর্তি হতে পারে তাহলে সে অবশ্যই আগামিতে বড় মাপের অ্যাথলেটিকস হতে পারবে।'
সাঁথিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ দেলোয়ার বলেন, ‘আমাদের এলাকায় সুবর্নার মত একজন অ্যাথলেটিক্স গড়ে ওঠায় আমরা গর্ববোধ করি। আমি ব্যাক্তিগতভাবে তাকে কিছুটা আর্থিক সহযোগিতা করেছি । সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে মেয়েটার স্বপ্ন পূরণ হবে।'
pabnasamachar.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়