বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ১১ ১৪৩১ ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
পাবনার খবর
প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১
সরকারী জমি দখল ও অনিয়মের বিরুদ্ধে মুখ খোলায় মুক্তিযোদ্ধা এক ইউপি চেয়ারম্যানকে লাঞ্ছিত ও হত্যার হুমকি দিয়েছে পাবনা-২ আসনের সাবেক এমপি খন্দকার আজিজুল হক আরজু।
এ ঘটনায় ঐ মুক্তিযোদ্ধা শুক্রবার সন্ধ্যায় সাবেক এমপি আরজু ও তার তিন সহযোগীর নাম উল্লেখ করে আমিনপুর থানায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরী করেছেন। শুক্রবার বিকেলে জেলার বেড়া উপজেলার পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়নের একটি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা এ এম রফিকুল্লাহ বেড়া উপজেলার পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
মুক্তিযোদ্ধা এ এম রফিকুল্লাহ জানান, শুক্রবার দুপুরে বক্তারপুর গ্রামের আব্দুল মতীনের বাড়িতে একটি কুলখানীর অনুষ্ঠান ছিল। বেলা আড়াইটার পর পরই পাবনা-২ আসনের সাবেক এমপি খন্দকার আজিজুল হক আরজু ওই অনুষ্ঠানে ১০/১২ অনুসারীকে নিয়ে আসেন। অনুষ্ঠানে আমার উপস্থিতির খবর পেয়েই বিষোদগার করে শ্লোগান দিতে শুরু করেন। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমি ওই বাড়ির একটি কক্ষে আশ্রয় নেই। কিছুক্ষণ পর তিনি ওই ঘরে ঢুকে আমাকে অবৈধ এমপি বাজার বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। এ সময় উপস্থিত লোকজন আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি মুক্তিযোদ্ধা নিয়েও অশ্রাব্য ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন এবং আমাকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকী দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যান। এ সময় উপস্থিত লোকজন সাবেক এমপির এমন আচরণে হতবিহবল হয়ে পড়েন। তারা এ সময় আমাকে শান্তনা দিয়ে বাড়ি পৌছে দেন বলেও দাবী করেন এই মুক্তিযোদ্ধা।
চেয়ারম্যান রফিকুল্লাহ আরো জানান, সাবেক এমপি আরজু নগরবাড়ী এলাকায় ৮ একর সরকারী জমি দখল করে নিজের নামে অবৈধ মার্কেট গড়েছেন। তার এই অপকর্মের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেয়ায় আমার উপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তার অনুসারী অবৈধ অস্ত্রধারী চরমপন্থি ও সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। আমি নিরপত্তাহীনতায় ভুগছি, প্রশাসনের নিকট জীবনের নিরপত্তা চেয়ে থানায় ডায়েরী করেছি। পাশাপাশি বিষয়টি স্থানীয় এমপি আহমেদ ফিরোজ কবিরসহ দলীয় নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেছি। ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একজন সাবেক আইন প্রণেতার মারমুখি আচরণে মনে হয়েছে তিনি পরিকল্পিত ভাবেই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। দোয়া মাহফিলের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা চেয়ারম্যান এ এম রফিকুল্লাহকে অপদস্থ করার পরেও তিনি অসীম ধৈর্য্যরে পরিচয় দিয়েছেন। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে এলাকায় অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরীর অপচেষ্টাও করছেন সাবেক এমপি আরজু। পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধার সাথে এমন অশোভন আচরণ করতে পারেন না, এটি দুঃখজনক ও লজ্জার। । সাবেক এমপি হিসেবে অসুস্থ মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। আমার মনে হয়েছে তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। বিষয়টি নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করা হবে।
পাবনা জেলা আওয়ামীলীগের নির্বাহী সদস্য সাবেক ছাত্রলীগ কেন্দ্রিয় নেতা খ ম হাসান কবির আরিফ বলেন, সাবেক এমপি আরজু এক সময়ে জাসদ গণবাহিনীর সন্ত্রাসী ছিলেন। পরে হাওয়া ভবনের বিএনপির দূর্নীতিবাজদের সাথে সখ্যতা গড়ে ব্যবসা বানিজ্য করেছেন। কিভাবে তিনি আওয়ামীলীগের নেতা ও এমপি হয়েছেন, তা তদন্ত হওয়া দরকার। একজন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান হিসেবে মুত্তিযোদ্ধাদের অপদস্ত করার তীব্র নিন্দাই শুধূ নয়, বিচার দাবী করি।
পাবনার মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম রবি বলেন, সাবেক এমপি আরজু মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদান কারী দল আওয়ামীলীগের দায়িত্বশীল পদে থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিষোদগার করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। আমি তার ধৃষ্ঠতাপূর্ণ আচরণের শাস্তি দাবী করছি। পাবনা-২ আসনের সাবেক এমপি খন্দকার আজিজুল হক আরজু বলেন, চেয়ারম্যান রফিকুল্লাহকে লাঞ্ছিত করার কোন ঘটনাই ঘটেনি। তাকে কথিত এমপি বাজার নিয়ে কথাকাটাকাটি হয়েছে মাত্র। মুক্তিযোদ্ধা নিয়েও কটুক্তি বা তাকে হত্যার হুমকীর বিষয়টি অসত্য।
এ ব্যাপারে আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রওশন আলী বলেন, পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ এম রফিকুল্লাহ’র অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
pabnasamachar.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়