শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ৫ ১৪৩১ ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
পাবনার খবর
প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০২০
শারীরিক প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম দেয়ায় পাবনার চাটমোহর দুলালী খাতুন নামে এক গৃহবধুকে তালাক দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বামী আলামিন হোসেনের বিরুদ্ধে। গত পাঁচ মাস আগে কাজী অফিসে এসে তালাক দেওয়ার পর কাগজ নিজের কাছে গোপন করে রাখে আলামিন। গত শনিবার ডাকযোগে আলামিন হোসেনের পাঠানো তালাক নোটিশ হাতে পায় দুলালী। এমন অমানবিক আচরণে স্তম্ভিত হয়ে পড়েছেন এলাকার মানুষ আলামিনের বিচার দাবী করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের কাটাখালি গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের মেয়ে দুলালী। ছোটবেলায় বাবা হারানো দুলালীর মা খইচন বেওয়া মানুষের বাড়ি কাজ করে অনেক কষ্টে একমাত্র মেয়েকে মানুষ করেন।
বছর পাঁচেক আগে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এবং আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে ধার দেনা করে একই এলাকার কান্দিপাড়া গ্রামের রব্বান হোসেনের ছেলে দিনমজুর আলামিন হোসেনের সাথে বিয়ে দেয়া হয় দুলালীর। বিয়েতে যৌতুক হিসেবে দেয়া হয়, নগদ ১০ হাজার টাকা, একটি বাইসাইকেলসহ নানা উপহার সামগ্রী। দুলালীর মা খইচন বেওয়া জানান, বিয়ের দুই বছর পর দুলালীর কোল আলো করে জন্ম নেয় ছেলে সন্তান ‘দুর্জয়’।
কিন্তু দুর্জয় শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় দুলালীর জীবনে অভিশাপ নেমে আসে। এর জন্য দুলালীকে দায়ী করে আলামিন, তার বাবা রব্বান হোসেন এবং শাশুড়ি ফরিদা খাতুন দুলালীকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। মায়ের বাড়ি ফিরে ন্যায় বিচার চেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বরসহ গ্রাম প্রধানদের কাছে দুলালী বার বার ধর্ণা দিয়েও মেলেনি কোনো প্রতিকার।
এদিকে, দেনমোহরের টাকা বুঝিয়ে না দিয়েই গত ৫ জুলাই চাটমোহর পৌর শহরের ম্যারেজ রেজিষ্টার আবদুর রাজ্জাকের কাজী অফিসে এসে আলামিন হোসেন তালাক নামায় সাক্ষর করে কাগজ নিজের কাছে গোপন করে রাখে। সম্প্রতি,আলামিন সেই তালাক নোটিশ ডাকযোগে দুলালীর কাছে পাঠায়। শনিবার সেই তালাক নোটিশ হাতে পায় দুলালী।
সোমবার কাটাখালি গ্রামে দুলালীর মায়ের বাড়ীতে গিয়ে কথা হয়, দুলালী খাতুনের সাথে। কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম দেয়া কী আমার অপরাধ? প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম দিয়েছি বলে স্বামী-শ্বশুর, শাশুড়ি মারধর করে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল। এখন স্বামী তালাক দিলো! আমি স্বামীর সংসার করতে চাই। আমি এর ন্যায় বিচার চাই।’
জানতে চেয়ে আলামিন হোসেনের মোবাইলে কল দিলে তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধী সন্তানের জন্য তালাক দেইনি। কার্যকলাপের কারণে তালাক দিয়েছি। ছেলে আমার যেহেতু, সেহেতু দায়িত্বও আমার। তালাক নোটিশ গোপন করলেন কেন এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি ফোনের সংযোগ কেটে দেন।
ঘটনার ব্যাপারে জানতে চেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নবীর উদ্দিন মোল্লার মোবাইলে বেশ কয়েকবার ফোন দিলে তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈকত ইসলামকে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, স্বামী বা স্ত্রী যে কেউ তালাক দিতে পারে।
তবে প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম দেওয়ার কারণে যদি এমন ঘটনা ঘটে তবে বিষয়টি অমানবিক। এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
pabnasamachar.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়