বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ চৈত্র ১৪ ১৪৩০ ১৮ রমজান ১৪৪৫
পাবনার খবর
প্রকাশিত: ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
জন্ম থেকেই শক্তি নেই দুই পায়ে। পা দুটো বাঁকাও। চলতে হয় হাঁটুতে ভর দিয়ে। হাতের আঙুলের অবস্থাও একই রকম। কিন্তু প্রতিবন্ধিতা ও দারিদ্র্য চাঁদ বাবুর লেখাপড়া আটকে রাখতে পারেনি। অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারণে গত বছর এসএসসি পাস করেন।
চলতি শিক্ষাবর্ষে পাবনার ভাঙ্গুড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের ডিজিটাল টেকনোলজি ইন বিজনেস ট্রেডে ভর্তি হয়েছেন। পড়ালেখা শেষ করে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে চান পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের জসিম ফকির-চম্পা দম্পতির বড় সন্তান চাঁদ বাবু।
অভাবে সংসারে ছয় সদস্যের পরিবারে চার ভাইবোন প্রতিবন্ধী চাঁদ বাবুর। প্রতি মাসে আশপাশের ৫০-৬০ পরিবারের বিদ্যুৎ বিল উঠিয়ে বিদ্যুৎ অফিসে জমা দিয়ে বিলপ্রতি যে ১০ টাকা করে পান, তা দিয়েই চলছে তার পড়ালেখার খরচ।
জানা গেছে, বাবা জসিম ফকির ইটভাটার শ্রমিক। সুস্থ থাকলে প্রতিদিন কাজ করে যে অর্থ পান তা দিয়ে তাদের সংসার চলে। তিনি অসুস্থ হলে থেমে যায় সংসারের চাকা। এর মধ্যে আবার চার সন্তানের লেখাপড়ার খরচ চালাতে মাঝেমধ্যেই হিমশিম খেতে হতো তাকে।
এক সন্তান পড়ে প্রাথমিকে, দুই সন্তান মাধ্যমিকে আর বড় চাঁদ বাবু একাদশ শ্রেণির ছাত্র। কিন্তু বাবার এ অবস্থা দেখে নিজেকে কিছু একটা করার প্রয়াস কুরে কুরে খাচ্ছিল চাঁদ বাবুকে। হাত-পায়ে জোর না পেলেও যে কোনোভাবেই হোক একটা কিছু করে অন্তত লেখাপড়ার আংশিক খরচ জোগাড় করতে হবে তাকে।
সে লক্ষ্যেই মায়ের সহযোগিতায় প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে বাড়ির আশপাশের ৫০-৬০ পরিবারের বিদ্যুৎ বিল নিয়ে হুইলচেয়ারে করে চলে যান ভাঙ্গুড়া বিদ্যুৎ অফিসে। জমা দিলে বিলপ্রতি চাঁদ বাবুকে দেওয়া হয় ১০ টাকা করে। এভাবে প্রতি মাসে যে অর্থ পান তাই দিয়েই লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন অদম্য এ তরুণ। ভেড়ামারা উদয়ন একাডেমি থেকে ২০২২ সালে এসএসসি পাসের পর ভর্তি হন কলেজে।
ভাঙ্গুড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ মো. বদরুল আলম বিদ্যুৎ বলেন, প্রতিবন্ধী চাঁদ বাবুর পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ দেখে মুগ্ধ হয়ে কলেজের পক্ষ থেকে তাকে ভর্তি করা হয়েছে। আগামীতেও পড়ালেখার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ তাকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, প্রতিবন্ধিতা জয় করে দরিদ্র পরিবারের চাঁদ বাবু এরই মধ্যে লেখাপড়ায় যে নজির দেখিয়েছে, তা প্রশংসাযোগ্য। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করতে খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। এভাবে সে আরও এগিয়ে যাক সেই প্রত্যাশা করি।
pabnasamachar.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়