বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ১০ ১৪৩১ ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
পাবনার খবর
প্রকাশিত: ৮ আগস্ট ২০২২
শত প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে জীবনে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার শারীরিক প্রতিবন্ধী মোছা. তানিয়া খাতুন। যে কেউ হঠাৎ দেখে মনে করতে পারে সাত-আট বছরের শিশু।
অথচ জন্ম সনদ বলছে, তার বর্তমান বয়স ১৯ বছর। অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী তিনি। অসচ্ছল পরিবারে জন্ম নেওয়া তানিয়া শিক্ষা জীবন শেষ করে পরিবারের হাল ধরতে চান। পরিবারের সচ্ছলতা ফেরানোর পাশাপাশি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চান তিনি। ছোট থেকে স্বপ্ন ছিল আইনজীবী হওয়ার। কিন্তু অর্থের অভাব আর শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় ভেঙে গেছে সেই স্বপ্ন। এখন তানিয়ার দরকার সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা।
সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে তানিয়ার সংবাদ প্রকাশের পর বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয় তানিয়াকে নিয়ে। এখন তার পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিচ্ছেন চিকিৎসকসহ স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা।
পাবনা আটঘরিয়া উপজেলার চাঁদভা ইউনিয়নের হাপানিয়া গ্রামের দরিদ্র দিনমজুর তাজুল ইসলাম ও নাছিমা খাতুন দম্পতির বড় সন্তান তানিয়া। দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে তানিয়া সবার বড়। সমাজের আর দশটা শিশুর মতই স্বাভাবিকভাবে জন্ম নিয়েছিল তানিয়া। কিন্তু পরবর্তীতে বয়স অনুপাতে শারীরিকভাবে গঠনে বৃদ্ধি পায়নি সে।
তানিয়ার প্রবল ইচ্ছা শক্তির কাছে হার মেনেছে তার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। সমাজের বাঁকা চোখ ও কটু কথা উপেক্ষা করে চালিয়ে গেছেন শিক্ষা জীবন। ২০১৯ সালে বেরুয়ান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০২১ সালে বেরুয়ান মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছেন।
বর্তমানে আটঘরিয়া সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী সে। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় তানিয়া জানতে পারেন তার শারীরিক অক্ষমতার বিষয়টি। তারপর থেকে সমাজের মানুষের নানা কথা সহ্য করে চলেছেন তিনি।
তানিয়ার বাবা তাজুল ইসলাম ও মা নাছিমা খাতুন কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, এখনো আমার মেয়েকে নিয়ে চিন্তার শেষ নেই। সমাজের অনেক শিক্ষিত বেকার ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অর্থের অভাবে তার সুচিকিৎসা করাতে পারিনি। এখন তার দরকার সুচিকিৎসা আর একটা চাকরি।
বেরয়ান বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিতালী খাতুন বলেন, তানিয়া আমাদের স্কুলের ছাত্রী ছিল। তাকে আমরা আলাদাভাবে যত্ন করেছি, সহযোগিতা করেছি। ওর মনোবলের কাছ থেকে অনেক মেয়েরই শিক্ষা নেওয়ার আছে।
আটঘরিয়া সরকারি কলেজের প্রভাষক নাছিমা আক্তার ও মো. রজব আলী বলেন, অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও সে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে গেছে। কলেজের সমস্ত খরচ ফ্রি করে দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই তানিয়া শিক্ষা অর্জন করে অনেক বড় হোক।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সালেহ মুহাম্মদ আলী বলেন, আধুনিক চিকিৎসায় এই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সম্ভব।
আটঘরিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মাকসুদা আক্তার মাসু বলেন, তানিয়া ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে তার জন্য সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
তানিয়া খাতুন বলেন, আমাকে সবাই কষ্ট দিয়েছে। আমার সঙ্গে কেউ খেলত না, মিশতো না। স্বপ্ন ছিল আইনজীবী হবো কিন্তু অর্থ আর শরীরের সমস্যা আমাকে হতে দিল না। এখন একটি চাকরি পেলে পরিবারকে দেখতে পারতাম। আমার জন্য দোয়া করবেন। বাবা মায়ের সেবায় যেন পাশে থাকতে পারি।
তানিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য অর্থের প্রয়োজন। সরকারি-বেসরকারি ও বিত্তবানদের সহযোগিতায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে তানিয়া এমনটাই প্রত্যাশা সবার।
pabnasamachar.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়