শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ৬ ১৪৩১ ১১ শাওয়াল ১৪৪৫
পাবনার খবর
প্রকাশিত: ২ জুন ২০২০
পাবনার চর অঞ্চলে দেখা দিয়েছে বিলুপ্তপ্রায় বিষধর ‘চন্দ্রবোড়’ (যার ইংরেজি নাম ‘রাসেল ভাইপার’) সাপের উপদ্রব। পদ্মার চরের ফসলের মাঠ, ঝোপ-ঝাড় এমনকি বসতবাড়িতেও দেখা মিলছে বিশ্বের অন্যতম বিষধর সাপটির।
এদিকে প্রতিষেধকের সহজলভ্যতা না থাকায় এ ঘটনা জানার পর আসন্ন বর্ষা মৌসুম সামনে রেখে চরাঞ্চলের মানুষকে সর্তকতার সঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ। আসছে বর্ষার সময় এই বিষধর সাপ জনবসতি অঞ্চলে চলে আসতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এ কারণে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন পাবনার চর অঞ্চলের সাধারণ কৃষকেরা।
গত শনিবার রাতে ঈশ্বরদী উপজেলার সাড়া ইউনিয়নের মাঝদিয়া বড়পাড়া গ্রামের সেলিনা খাতুন নিজ ঘরেই সাপের ছোবলের শিকার হন। পরিবারের লোকজন আগ্রাসী প্রকৃতির সাপটিকে মেরে রোগীর সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
চিকিৎসকরা প্রথমে সাপটিকে চিনতে না পারলেও, পরিবেশবিদদের সহায়তায় নিশ্চিত হন সাপটি ‘চন্দ্রবোড়’। তবে, ছোবলের শিকার হলেও সৌভাগ্যক্রমে সেলিনার শরীরে বিষ প্রয়োগ করতে পারেনি বলেই ধারণা চিকিৎসকদের।
এ ঘটনার পরে পাবনা জেলা প্রশাসকের নির্দেশে গতকাল সোমবার সকালে পাবনা সদর উপজেলার দোগাছি ইউনিয়নের কমরপুর বিস্তীর্ণ পদ্মার চর অঞ্চল পরিদর্শনে যান প্রশাসনের একটি বিশেষজ্ঞ দল। সেখানে নদী পার হয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার ভেতরে গিয়ে সাধারণ কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেন তারা।
স্থানীয় কৃষক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, চরে নতুন নতুন পোকামাকড়সহ বিভিন্ন জাতের সাপের দেখা মিলছে। গত বছর বিষধর পোকা দেখা দিয়েছিলো এবার সাপের দেখা মিলছে। সম্প্রতি এই চরে কাজে এসে বেশ কয়েকজন সাপের ছোবলের শিকার হয়েছেন বলে জানান তারা। পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আবু সালেহ মোহাম্মদ বলেন, গত একমাসের মধ্যে সদর ও সুজানগর উপজেলার পদ্মার চরগুলিতেও একাধিকবার দেখা মিলেছে বিশ্বের বিষাক্ততায় পঞ্চম ও ক্ষীপ্রতার তালিকায় প্রথমে থাকা এই সাপটির।
বর্ষা মৌসুমে আশপাশের লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে এই বিষাক্ত সাপ। তাই চর অঞ্চলগুলোতে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এই সাপের প্রতিষেধক নেই বল্লেই চলে। তাই সাবধানে কাজ করতে হবে।
সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. তোজাম্মেল হোসেন বলেন, এই সাপের কথা শুনে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে চর অঞ্চলগুলোতে বেশ কয়েকবার পরিদর্শনে গিয়েছি। আমাদের চোখে এখনো পড়েনি ওই সাপটি। তবে এই সাপের ছোবলে বেশ কিছু মানুষ আক্রান্ত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এই সাপ খুব দ্রুত চলাচল করতে পারে ও অন্যান্য সাপের থেকে দ্রুত বংশ বিস্তার করে। চর অঞ্চলের কৃষকদের সাবধানে কাজ করতে হবে।
পাবনা জেলা প্রশাসক পরিদর্শন দলের প্রধান সহকারী কমিশনার (ভূমি) রোকসানা মিতা বলেন, পদ্মার এই বিশাল চর অঞ্চল ফসলসহ গো বিচরণের অন্যতম স্থান। শুষ্ক মৌসুমে এই চর অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের ফসলের আবাদ হয়ে থাকে। গত বছর এই চরে বিষাক্ত বিছা পোকা দেখা দিয়েছিলো। এবার বিষাক্ত সাপের কথা শোনা যাচ্ছে। কৃষকদের সাবধানে ও সর্তকতার সঙ্গে গামবুট পরে কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে চর অঞ্চলের কৃষকদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি। পরিদর্শন টিমের অন্যান্য সদস্যরা হলেন- সদর উপজেলার প্রকল্প কর্মকর্তা আব্দুল করিম ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমানসহ স্থানীয় কৃষক ও জন প্রতিনিধিরা সঙ্গে ছিলেন।
pabnasamachar.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়