বুধবার ০৮ মে ২০২৪ বৈশাখ ২৪ ১৪৩১ ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫
পাবনার খবর
প্রকাশিত: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
গত দুই মাসে পদ্মার করাল গ্রাসে পাবনা সদরের গোহাইলবাড়ি গ্রামের হতদরিদ্র মনোয়ারা খাতুন তিন বার বাড়িঘর সরিয়ে নিয়েছেন। এখন আর তার ঘর তোলার জায়গা নেই। পরিবার-পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করছেন। মনোয়ারার পরিবার এখনো সহায়-সম্বল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার, সচেতন মহল ও জনপ্রতিনিধিরা জানান, অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে পাবনায় পদ্মা নদী ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
গত কয়েক দিনে সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নের ২৭ পরিবারের অর্ধশতাধিক বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। শতাধিক বসতভিটা, প্রাথমিক বিদ্যালয়, জামে মসজিদ, ঈদগাহ, গোরস্থান ও ইটভাটা বিলীনের পথে।
এদিকে বেড়া উপজেলার কয়েকটি স্থানে নদীভাঙন বেড়েছে। আগস্ট মাসের শুরু থেকে নদীভাঙন শুরু হয়। এখন পর্যন্ত তা অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয়দের তথ্য মতে, ২৫ একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলোর টিন, কাঠসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র স্তূপ করে রাখা হয়েছে। আবার অনেকেই সব কিছু ভেঙে অন্যত্র বাড়ি বানাচ্ছেন। অনেকে গরু-ছাগল-হাঁস-মুরগিসহ যাবতীয় জিনিস বিক্রি করে দিয়েছেন।
যাদের সামর্থ্য আছে তারা অন্য জায়গায় নতুন করে ঘর তুলে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিচ্ছেন। আর সামর্থ্যহীনরা খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
খাইরুল ইসলাম, বাচ্চু আলী, ওহাব আলী, মনোয়ারা, সালমা খাতুনসহ বেশ কয়েকজন জানান, আগস্ট মাসের শুরুতে একদিন রাতে দেখি, প্রচন্ড শব্দে পদ্মার পানি ভয়ঙ্কর বেগে ঘরের দিকে আসছে। চিৎকার করে আশপাশের লোকদের ডেকে তুলে ঘর ভেঙে সরাতে শুরু করি।
এরই মধ্যে কয়েকটি ঘর নদীতে বিলীন হয়ে যায়। মসজিদ, স্কুল, ঈদগাহ বিলীনের অপেক্ষায় আছে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তারা বলেন, এই মৌসুমে তিন বার ঘরবাড়ি সরিয়েছি। এখন আর কোথাও ঘর তোলার মতো জায়গা নেই। হাতে টাকা-পয়সাও নেই। অন্য জায়গায় জমি কিনে বাড়ি করব। আমরা ঠিকমতো সংসারই চলাতে পারি না। মোটা অংকের টাকা দিয়ে জায়গা জমি কিনে বাড়িঘর তৈরি করব কীভাবে?
ছেলে-মেয়েদের স্কুল খুলে দিয়েছে। রাতে পড়ালেখা করতে পারছে না। সবাই নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি। সব কিছু হারিয়ে এখন আমরা নিঃস্ব।
তারা আফসোস করে বলেন, খেয়ে না খেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত-দিন যাপন করছি।
কয়েকদিন আগে এমপি মহোদয় এসে নদী ভাঙনরোধে স্থায়ী সমাধানের কথা বলে গেছেন। আমাদের জন্য কোনো ব্যবস্থা হবে কি না জানি না। আমরা ত্রাণ চাই না নদী ভাঙনরোধ চাই। স্থায়ী সমাধান দিতে হবে।
pabnasamachar.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়