শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ৫ ১৪৩১ ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
পাবনার খবর
প্রকাশিত: ৭ মার্চ ২০২০
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চে পাবনায় দুজন মুক্তিযোদ্ধা এবং একজন ভাষা সংগ্রামী ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকের নামে পৌর এলাকার তিনটি রাস্তার নামকরন করেছে পৌরসভা । শনিবার সকালে বড় বাজারের দৈ বাজার মোড়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু সড়কের উদ্বোধন করেন মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান হাবিব।
পরে অটুয়া চাঁদা খাঁর বাঁশতলা মোড়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান হাবিব সড়কের উদ্বোধন করেন মুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী এবং পাশেই মরনোত্তর একুশে পদক প্রাপ্ত ভাষা সংগ্রামী মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম বাদশার নামের সড়কটি উদ্বোধন করেন মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব সাবিরুল ইসলাম।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, পাবনা পৌরসভার মেয়র কামরুল হাসান মিন্টু, পাবনা চেম্বর অব কমার্স এন্ড ইন্ডস্ট্রিজের সভাপতি সাইফুল আলম স্বপন চৌধুরী, সিনিয়র সহ-সভাপতি আলী মর্তুজা বিশ্বাস সনি, পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম রবি, সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান, অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরীর মহাসচিব আব্দুল মতীন খান ও জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক শিবলী সাদিকসহ স্থানীয় বিশিষ্ট জনেরা।
পাবনা পৌরসভার মেয়র কামরুল হাসান জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধের তিন বীর সেনানীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে এ নামকরণ করা হয়েছে । পৌর কর্তৃপক্ষ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চে তাদের সম্মানিত করতে পেরে গর্বিত। ভাষাসংগ্রামী ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম বাদশা ১৯২৯ সালের ১৪ এপ্রিল পাবনা শহরের কৃষ্ণপুর (মোকসেদপুর) মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনে পাবনায় যে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয় তিনি সেই পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ছাত্র ফেডারেশন পাবনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
ভাষা আন্দোলনে জোরালো ভূমিকা রাখার কারণে ‘৪৮-এর ৩ মার্চ তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল রাজশাহী কারাগারের খাপড়া ওয়ার্ডে আটক রাজবন্দিদের ওপর পুলিশ নির্মমভাবে গুলি চালালে সাতজন বিপ্লবী রাজবন্দি শহীদ হন এবং আমিনুল ইসলাম বাদশাসহ ত্রিশজনেরও অধিক গুরুতর আহত হন। দু’টি বুলেট বাদশার উরুতে ঢুকে যায়, যা তাঁকে আমৃত্যু যন্ত্রণা দিয়েছে ।
১৯৬৭ সালে ভুট্টা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কারণে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ‘৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ এবং সাহসী ভূমিকা রাখার কারণে আবারও গ্রেফতার হন এবং দুই সপ্তাহ পরে কারামুক্ত হন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে পাবনায় গঠিত স্থানীয় সরকার পরিষদ ও হাইকমান্ডের তিনি ছিলেন অন্যতম সদস্য। ১৯৯৮ সালের ৪ঠা আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। চলতি বছর সরকার ভাষা আন্দোলনে অবদানের জন্য মরনোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করে। দেশ বরেন্য শিল্পোদ্যোক্তা ও মুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু মুজিব বাহিনীর হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চে জাতির জনকের আহবানে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক হিসেবে সফল এই ব্যবসায়ীর দক্ষতায় স্কয়ার গ্রুপের ব্যবসায়িক প্রসারের পাশাপাশি কর্মসংস্থান হয়েছে পাবনার হাজার হাজার মানুষের। দেশের ক্রীড়া সংস্কৃতি অংগনে তার সরব পদচারণা।
তিনি একজন দক্ষ ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের সহ সভাপতি, আবাহনী লিমিটেড ক্লাবের পরিচালক, বাংলাদেশ ফুটবল এসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনে কাজ করেন। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি পাবনার ক্রীড়া সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিতে তাঁর অবদান স্মরণযোগ্য।
তিনি পাবনার ঐতিহ্যবাহী পাঠাগার অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরী ও বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্রের সভাপতির দ্বায়িত্ব পালন করছেন। পাবনা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমাণ্ডার হাবিবুর রহমান হাবিব জেলার অন্যতম কনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা। মাত্র তের বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে তিনি গৌরবময় অবদান রাখেন। মুজিব বাহিনীর হয়ে হাবিবুর রহমান হাবিব জেলার সুজানগরসহ বিভিন্ন এলাকায় সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমাণ্ডার হিসেবে, দুঃস্থ ও অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন। তিনি পাবনা মোটর মালিক গ্রুপেরও সভাপতি।
স/সা
pabnasamachar.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়