শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ১৩ ১৪৩১ ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
পাবনার খবর
প্রকাশিত: ৬ মে ২০২১
পাবনায় অবৈধ যৌন উত্তেজক সিরাপ তৈরীর কারখানায় অভিযান চালিয়ে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা ও কারখানা সীলগালা করে দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ ও জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় আফুরিয়া ফাষ্ট ফুড কারখানা থেকে বিপুল পরিমান অবৈধ এসএস পাউডার, তাদের উৎপাদিত সিরাপসহ বিভিন্ন ক্যামিকেল পাওয়া যায়।
সংুশ্লষ্ট সুত্র জানায়, গত একযুগ ধরে পাবনার আফুরিয়ায় ফাষ্ট ফুড (এইচবিডি) ইন্ডা: প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানীর মালিক আব্দুর রাজ্জাক ও তার শ্যালক আরিফ ফ্রুট সিরাপ তৈরীর অনুমোদন নিয়ে যৌন উত্তেজক সিরাপ তৈরী করে বাজারজাত করে আসছেন। তাদের উৎপাদিত এইসব যৌন উত্তেজক সিরাপ পান করে ইতোমধ্যে অনেকেই সর্বশান্ত হয়েছেন। ২০১৯ সালের জুন মাসে নওগাঁ শহরে এই ফাস্টফুড কোম্পানীর তৈরীকৃত যৌন উত্তেজনা বর্ধক ফাস্ট কিংস আপ ফ্রুট সিরাপ পান করার পর এক ব্যাক্তি একটি বাড়িতে প্রবেশ করে মাকে হত্যার পর মেয়েকে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি নিয়ে সারা দেশে আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে। এই ফ্যাক্টরীর উৎপাদিত হট ফিলিং সেক্সুয়েল ড্রিংক্স সেবন করে নওগাঁয় এ পযন্ত ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং অনেকে অসুস্থ্য অবস্থায় নওগাঁ হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে নঁওগা থানায় একটি মামলাও রয়েছে।
২০১৯ সালের ২৫ জুন রাতে নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) লিমন রায়’র নেতৃত্বে নওগাঁ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ রাজ্জাক হাজীর আফুরিয়া ফাষ্ট ফিলিংস নামের এই ফ্যাক্টরিতে অভিযান চালিয়ে রাজা, নজরুলসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে। সেই সাথে ফ্যাক্টরী সিলগালা করে দেন। একই সাথে নওগাঁ জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান এই কোম্পানীর মালামাল জব্দ করা হয়। পরে অদৃশ্য ক্ষমতায় সেই গালা খুলে পুনরায় ব্যবসা শুরু করা হয়। অভিযানে নেতৃত্বদানকারী পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মাসুদ আলম জানান, আফুরিয়ার ফাষ্ট ফিলিংস ফ্যাক্টরীতে দীর্ঘদিন ধরে হট ফিলিংসসহ কয়েকটি আইটেমে সেক্সুয়াল সিরাপ তৈরী করা হচ্ছে, যা দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার মুদির দোকানে বিক্রি হয়। ফ্যাক্টরীর স্বত্বাধিকারী আরিফুল ইসলাম আরিফ ও আব্দুর রাজ্জাক আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ম্যানেজ করে মানুষের জন্য ক্ষতিকারক ড্রাগ তৈরী করে ছ বলে অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। ফ্যাক্টরীর মালিক পাবনার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্র ছাঁয়ায় থাকার কারণে এ বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। বিষয়টি আমাদের নজরে এলে ঔষুধ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট কে এম মাহমুদ হাসানের সমন্বয়ে একটি টীম অভিযান চালায়। অভিযানে বিপুল পরিমান নিষিদ্ধ এসএস পাউডারসহ বিভিন্ন উৎপাদিত পণ্য পাওয়া যায়। তবে কারখানার মালিক রাজ্জাক হাজী ও আরিফ অভিযানের আগেই পালিয়ে যায়। অভিযান শেষে সেখানে তাদেও ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা ও কারখানাটি সীলগালা করে দেওয়ায় হয়।
একই সাথে তাদের উৎপাদিত পণ্য ঢাকার একটি রাষ্ট্রীয় ল্যাবে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্যে প্রেরন করা হয়েছে। টেষ্টে যদি বিএসটিআইয়ের অনুমোদিত পণ্যের সাথে মিল পাওয়া না গেলে পুনরায় মামলা করা হবে বলেও তিনি জানান।
অভিযানের সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট কে এম মাহমুদুল হাসান, ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর পাবনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সুকর্ণ আহমেদসহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল।
এ বিষয়ে পাবনার বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা: রাম দুলাল ভৈৗমিক বলেন, এ ধরনের মান নিয়ন্ত্রনহীন যোন উত্তেজক সিরাপ সেবনে তাৎক্ষনিক উত্তেজনা দেখা দিলেও দীর্ঘমেয়াদী পার্শ্ব প্রতিক্রীয়ার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে লিভার, কিডনি ড্যামেজের পাশাপাশি হৃদযন্ত্রের ক্রীয়া বন্ধ হয়ে মারা যেতে পারে সেবনকারীরা। ড্রাগের চেয়েও ক্ষতিকর এই সিরাপ। এই পণ্যটির ভোক্তা হলো ট্রাক চালক, রিক্সা চালক থেকে শুরু করে বেকার যুবক ও শিক্ষার্থীরা। এ ব্যাপারে সরকারের কঠোর নজরদারীর দাবীও জানান।
pabnasamachar.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়