বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ১১ ১৪৩১ ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
পাবনার খবর
প্রকাশিত: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০
শহীদ মিনার, বাঙালির চেতনার বাতিঘর। মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক স্থাপনা রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। এ মিনারের কথা শুধু বাঙালি জাতি নয়, জানে বিশ্ববাসীও। ১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় সর্বস্তরের জনতা। তবে এখন যে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানো হয়, সেটি কিন্তু প্রথম শহীদ মিনার নয়।
প্রথম শহীদ মিনারটি নির্মিত হয়েছিল ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়াসহ আরও কিছু সাইটে প্রথম শহীদ মিনারের সেই ছবিটি থাকলেও তা অস্পষ্ট। অনেক খোঁজাখুঁজির পর যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাংবাদিক আশফাক স্বপনের ‘দ্য ফার্স্ট শহীদ মিনার’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ও ঝকঝকে ছবি পাওয়া গেল। আশফাক স্বপনের বাবা সেই সময়ের ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র বদরুল আলমই প্রথম শহীদ মিনারের নকশাটি করেছিলেন। আর ছবি তুলেছিলেন আরেক চিকিৎসক আবদুল হাফিজ।
বাংলাপিডিয়ায় বলা হয়েছে, মেডিকেল ছাত্রদের উদ্যোগে বর্তমান মিনারের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে শহীদদের রক্তভেজা স্থানে সাড়ে ১০ ফুট উঁচু এবং ৬ ফুট চওড়া ভিত্তির ওপর ছোট স্থাপত্যটির নির্মাণকাজ শেষ হলে ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ লেখা একটি ফলক লাগানো হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন এর উদ্বোধন করেন। কিন্তু বিকেলে পুলিশ সেটি ভেঙে ফেলে। তবে সারা দেশে ছোট ছোট অসংখ্য মিনার গড়ে ওঠে।
১৯৫৩ থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি ‘শহীদ দিবস’ হিসেবে পালিত হতে থাকে। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় এসে একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস ও ছুটি ঘোষণা করে। এরপর নতুন শহীদ মিনার তৈরির ঘোষণা আসে। ১৯৫৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়বার শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন পূর্ববঙ্গ সরকারের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী আবু হোসেন সরকার, মাওলানা ভাসানী এবং শহীদ বরকতের মা হাসিনা বেগম। শিল্পী হামিদুর রহমানের পরিকল্পনা ও নকশা অনুযায়ী ১৯৫৭ সালের নভেম্বর থেকে শহীদ মিনার তৈরির কাজ শুরু হয়। কিন্তু ১৯৫৮ সালের অক্টোবরে সামরিক আইন জারি হলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৫৯ থেকে ১৯৬২ পর্যন্ত লোকজন অসম্পূর্ণ এই মিনারেই ফুল দিয়েছে।
১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী মূল নকশা পরিবর্তন করে আরেকটি নকশা করা হয়। এরপর দ্রুত মিনারের কাজ শেষ হয়। ১৯৬৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এর উদ্বোধন করেন বরকতের মা। এই মিনারই পরে একুশের চেতনার প্রতীক হয়ে ওঠে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি বাহিনী মিনারটি ভেঙে সেখানে ‘মসজিদ’ লিখে দেয়।
দেশ স্বাধীন হলে ১৯৭২ সালে নতুন করে মিনার তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এবারও মূল নকশা এড়িয়ে ১৯৬৩ সালের সংক্ষিপ্ত নকশার ভিত্তিতেই কাজ শেষ করা হয়। ১৯৭৬ সালে নতুন নকশা হলেও বাস্তবায়িত হয়নি। তবে ১৯৮৩ সালে মিনার চত্বর কিছুটা বিস্তার করে শহীদ মিনারটিকে বর্তমান অবস্থায় আনা হয়। সেই থেকে জাতি এখানেই শ্রদ্ধা জানায়।
pabnasamachar.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়