বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ১২ ১৪৩১ ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
পাবনার খবর
প্রকাশিত: ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০
শিক্ষার্থীদের কাছে থাকবে বিনামুল্যের সরকারি পাঠ্যবই। আর সেই পাঠ্য বইয়ের আলোকে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান করাবেন শিক্ষকরা। কিন্তু সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে পাবনার চাটমোহরে প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডার গার্ডেন স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের ‘সহায়ক বই’ (যা এক সময় নোট গাইড নামে বিক্রি হতো) পড়ানো হচ্ছে। অতিরিক্ত টাকা খরচ করে সন্তানদের এসব বই পড়াতে নারাজ অভিভাকরা। আর মুল বইয়ের বাইরে সহায়ক বইয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। তবুও স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও অন্য শিক্ষকদের মৌখিক নির্দেশে অভিভাবকরা এসব বই কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ব্যাপারে খোদ শিক্ষাকর্মকর্তাও অবগত আছেন বলে স্বীকার করেছেন। তবে তিনি কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
অনুসন্ধানে ‘সহায়ক বই’ নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নানা অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে। জানা গেছে, ‘নোট গাইড বই’ উচ্চ আদালত থেকে নিষিদ্ধের পর সেগুলো নাম পাল্টে এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ‘সহায়ক বই’ হিসেবে। যারা বই প্রকাশ করেন তারা কৌশলে নাম পরিবর্তন করে বাজারে বিক্রি করছেন সহায়ক বই। বছরের শুরুতেই বেশিরভাগ স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা প্রকাশনার প্রতিনিধিদের সাথে গোপনে মৌখিক চুক্তি সম্পাদন করেছেন। উপঢৌকন ও কমিশন খেয়ে প্রধান শিক্ষকরা তাদের পছন্দের ‘সহায়ক বই’ (গাইড বই) কিনতে বলছেন শিক্ষার্থীদের। প্রতিদিন প্রকাশনার প্রতিনিধিরা লাইব্রেরীতে বসে নজর রেখে দেখছেন প্রধান শিক্ষকদের সাথে তাদের যে ‘চুক্তি’ তা কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে!
আরো জানা গেছে, উপজেলার ১৫৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং অর্ধশতাধিক কিন্ডার গার্ডেনের মধ্যে বেশিরভাগ স্কুলেই চলছে এসব ‘সহায়ক বই’। অনেক সচেতন অভিভাবক এসব সহায়ক বই কিনতে অনীহা দেখালেও শেষ পর্যন্ত সন্তানদের চাপে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার অনেক অভিভাবক এসব বই কিনতে না পারায় তাদের সন্তানরা ক্লাসে গিয়ে পড়া পারছেন না। আর এসব বই পড়ে শিক্ষার্থীরা মুল বিষয় না বুঝে শুধু প্রশ্ন ও উত্তরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে। শুধু তাই নয়, কোনো কোনে স্কুলে একজন শিক্ষার্থীকে একাধিক গাইড বা সহায়ক বইও কিনতে হচ্ছে। আর শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকরাও মুল বই না পড়িয়ে সহায়ক বই থেকে পড়াচ্ছেন। এতে শিক্ষার গুণগত মান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। অভিযোগ রয়েছে, একজন সহকারী শিক্ষা অফিসারের এক নিকটাত্মীয় প্রভাব খাটিয়ে ‘চ্যান্সেলর’ নামের সহায়ক বইয়ে শিক্ষার্থীদের কেনার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে চাপ প্রয়োগ করছেন প্রধান শিক্ষকদের।
সহায়ক বই কিনতে আসা আফজাল হোসেন নামের এক ভ্যান চালক বলেন, ছেলে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। স্কুল থেকে বলেছে গাইড বই লাগবে। কিন্তু দামের কথা শুনে না কিনে ফিরে আসি। সারাদিন খেটে যা আয় করি তাই দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর। বই কিনব কীভাবে?
মিলন হোসেন নামে অপর এক যুবক বলেন, ছোট ভাই দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। তার জন্য গাইড বই কিনতে এসেছি। কিন্তু আমরা পড়াশোনা করার সময় তো এসব বই লাগেনি!
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, কোনো শিক্ষার্থীকে এসব বই কিনতে বলা হয়নি। অভিভাবকরা নিজেরাই এই বইগুলো কিনে থাকেন। আর দোষ হয় আমাদের। তবে মাঝে মধ্যে কিছু বিষয়ে আটকে গেলে সহায়ক বই থেকে সমাধান বের করা হয় বলে স্বীকার করেন তিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে গাইড বই এখন নাম পাল্টে সহায়ক বই নামে বিক্রি হচ্ছে। স্কুলে সেগুলো পড়ানো সম্পূর্ণ নিষেধ। তবে কিছু শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সেগুলো কেনার কথা বলেছেন বলে শুনেছি।’ তাদের বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
স/এমএমআই
pabnasamachar.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়