বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ১১ ১৪৩১ ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
পাবনার খবর
প্রকাশিত: ৮ জানুয়ারি ২০১৯
২০১৮ সালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (খুমেক) রোগীদের সেবার মান বাড়াতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করায় সুফল পাচ্ছে রোগীরা। হাসপাতালে রোগী ভর্তি হলেই তাদের জন্য খাবার বরাদ্দ রয়েছে। আগে নির্দিষ্ট শয্যা সংখ্যার বেশি ভর্তি রোগীদের জন্য খাবার বরাদ্দ ছিলো না। এছাড়া মানসিক রোগ বিভাগসহ ৬টি বিভাগ ও SCANU ইউনিট চালু করা হয়েছে। নতুন আঙ্গিকে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট চালুতে রোগীদের সেবান মান বেড়েছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে জন্মলগ্ন থেকে মানসিক রোগ বিভাগ থাকলেও অদৃশ্য কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি। পাশাপাশি গ্যাস্ট্রো, নিউরো মেডিসিন, রেসপিরেটরি মেডিসিন, হেপাটলোজি ও এন্ড্রোক্রাইনোলজির আলাদাভাবে কোনো বিভাগ ছিল না। ফলে ওই সব রোগে আক্রান্ত সাধারণ রোগীদের বহিঃবিভাগ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েই বাড়ি ফিরে যেতে হতো। ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এ টি এম এম মোর্শেদ’র সভাপতিত্বে আনুষ্ঠানিকভাবে ১০টি বেডের মানসিক বিভাগ চালু করেন সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ মিজানুর রহমান মিজান। এরপর থেকেই বহিঃ ও আন্তঃবিভাগে ওই সব বিভাগ থেকে সাধারণ রোগী চিকিৎসা পেতে শুরু করেছে। খুমেক হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. এস এম ফরিদুজ্জামান বলেন, হাসপাতালের জন্মের পর থেকে আলাদাভাবে মানসিক বিভাগ চালু ছিল না। মানসিক রোগীরা আসলে তখন শুধু বহিঃবিভাগ থেকেই চিকিৎসা পেতো। অনেক সময় হতদরিদ্র পরিবার চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতেন। এখন বহিঃ ও আন্তঃবিভাগে মানসিক রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছে। এছাড়া যাবতীয় মানসিক রোগীদের সব ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে। এতে সুবিধা বঞ্চিত হতদরিদ্ররা রোগীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। ৫টি পুরুষ ও ৫টি মহিলা বেড নিয়ে এই বিভাগের যাত্রা শুরু। ওই হাসপাতালের ৪র্থ তলায় গ্যাস্ট্রো, নিউরো মেডিসিন, রেসপিরেটরি মেডিসিন, হেপাটোলজি ও এন্ড্রোক্রাইনোলজি বিভাগ চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে নিউরো মেডিসিন বিভাগে ৭টি বেড, গ্যাস্ট্রোতে ৬টি বেড, রেসপিরেটরি মেডিসিন ৭টি বেড, এন্ড্রোক্রাইনোলজি ২টি বেড ও এন্ড্রোক্রাইনোলজিতে ৬টি বেড নিয়ে বিভাগগুলো চালু করা হয়েছে। এর আগে ওই সব রোগীদের জন্য আলাদা কোনো ওয়ার্ড বা বিভাগ ছিল না।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৮ জুন থেকে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এ টি এম মঞ্জুর মোর্শেদ দায়িত্বগ্রহণ করেন। এর পর থেকেই তিনি মানসিক রোগ বিভাগ চালুসহ ২৭টি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হচ্ছে হাসপাতালে নিয়মিত অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত, রোগীদের খাবারের মান বৃদ্ধি, লাশঘর স্থানান্তর করা, দালাল প্রতারক প্রতিরোধ করা, ১টার পূর্বে ওষুধ প্রতিনিধিদের ভিজিট বন্ধ করা, প্যাথলজি বিভাগে স্যাম্পল কালেকশন সময় বৃদ্ধি করা, ব্লাড ব্যাংকের পাশে নতুন করে কক্ষ নির্মাণ, অনুমোদিত ৫শ’ শয্যার রোগীর পরিবর্তে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে ভর্তিকৃত সকল রোগীর খাবার ব্যবস্থা করা, ওয়ার্ড ইনচার্জদের দায়িত্ব পরিবর্তন করে নতুনদের দায়িত্ব অর্পণ করা, জখমি সনদপত্র প্রদানের জন্য বোর্ড গঠনপূর্বক কেবলমাত্র থানা ও আদালত থেকে চাহিদার প্রেক্ষিতে স্বচ্ছতার সঙ্গে জখমি সনদপত্র প্রদানের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেন ডা. এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ। তিনি ২০১৭ সালের ২৮ জুন এ দায়িত্ব পান। এর পর থেকে রোগীদের সেবার মান বৃদ্ধিতে একে একে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে শুরু করেন। ভর্তি রোগীদের পরিমাণ মতো খাবার না পাওয়া ও খাবারের অনিয়ম পাওয়ায় তত্ত্বাবধায়ক দুইজনকে শোকজ করেন। এরপর থেকে সিডিউল অনুযায়ী রোগীরা তাদের প্রাপ্য খাবার পেতে শুরু করে। রোগীরা ভর্তি হলেই তাদের জন্য খাবারের বরাদ্দ করা হচ্ছে। আগে নির্দিষ্ট শয্যা সংখ্যার বেশি ভর্তি রোগীর জন্য খাবার বরাদ্দ ছিল না। হাসপাতালটির জন্মলগ্ন থেকে এই নিয়মটি চালু ছিল না। ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে হাসপাতালে এই সুবিধা পেতে শুরু করেছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, Special Care Newborn Unit (SCANU) সেবাটি চালু করা হয়েছে। পূর্বে এ হাসপাতালে ছিলো না। এছাড়া হাসপাতালে প্রায়ই অক্সিজেন সঙ্কট থাকায় রোগীরা বাইরে থেকে ভাড়া করে আনতেন এখন অক্সিজেন রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া নতুন তিন ওটি চালুর জন্য সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। জনবল হলেই এটা এ মাসেই চালু করা সম্ভব বলে তিনি আশাবাদী। বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সিনিয়র স্টাফ নার্স ঝর্ণা খাতুন বলেন, নতুন আঙ্গিকে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা পৃথক ওয়ার্ড করা হয়েছে। খোলামেলা থাকার কারণে রোগীদের জন্য সুবিধা হয়েছে। আগে এক বাথরুম ও ড্রেসিং রুম থাকায় রোগীদের জন্য সমস্যা হতো। এখনো পৃথকভাবে ড্রেসিং রুম ও বাথরুম রয়েছে। মেডিসিন বিভাগে ভর্তি রোগী মো. সাইফুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন পরিমাণ মতো সকালে নাস্তা ও দুই বেলা খাবারের মান আগের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে। তিনি বলেন, ২০১৬ সালে তার ছেলে বাচ্চুকে এ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিলো। তখনকার খাবারের মান আর বর্তমানের খাবার মানের ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। এছাড়া সকল ভর্তি রোগীকেই খাবার সরবরাহ হচ্ছে এতে অসহায় রোগীরা একটু স্বস্তিতে রয়েছেন। যা পূর্বে ছিলো না।
pabnasamachar.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়