বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ১১ ১৪৩১ ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
পাবনার খবর
প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারি ২০২১
শত বছরের পুরোনো গাঁথুনি ভেঙে ৩৬ লাখ ৬৩ হাজার ৯শ টাকা ব্যয়ে ছয় মাস প্রকল্পের কাজ মাত্র তিন মাসের মধ্যেই দৃষ্টিনন্দন এবং আধুনিক করে সংস্কার করা হয়েছে। আরসিসি বেডব্লক ভেঙে নতুন করে ঢালাই করা হয়েছে। আগামী তিন দিন পর থেকে সংস্কার হওয়া গার্ডার ব্রিজের ওপর দিয়ে ৮৫ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে।
গতকাল সোমবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় সংস্কার কাজ শেষে উপজেলার মুলাডুলি (ঈশ্বরদী-ঢাকা) রেলরুটের মাঝগ্রাম-মুলাডুলির মধ্যবর্তী ৩ নম্বর গার্ডার ব্রিজে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী ৭৬৯ নম্বর আন্তঃনগর ধুমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন চালানো হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আবু জাফর, ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কার্য) সিরাজগঞ্জ শরিফুল ইসলাম শরিফ, (ব্রিজ) ঈশ্বরদী হাসান আলী, (পথ) সিরাজগঞ্জ আহসানূর রহমান, (পথ) ঈশ্বরদী বাকিয়াতউল্লাহ, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স পদ্মা ট্রেডিং এর স্বত্ত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম সুলতান।
ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত চুন-সুড়কি ও ইটের গাঁথুনির শক্তি কমে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল ঈশ্বরদীর মুলাডুলিতে তিন নম্বর রেলওয়ের গার্ডার ব্রিজ। অতিরিক্ত ট্রেন চলাচল করায় আরসিসি বেডব্লক ডেবে গিয়েছিল। ১০ কিলোমিটার গতি নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে প্রতিদিন ১৯ জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করতো।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সংস্কার কাজের শেষ দিনে মাঘের কনকনে ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে শ্রমিকরা অস্থায়ী জয়েন্ট সরিয়ে স্থায়ী গার্ডার পুনঃস্থাপন করছে। সিসি ব্লক সরিয়ে গার্ডার স্হাপন করে ট্রেন চলাচল করার জন্য রেললাইন উপযোগী করা হয়েছে।
শতবর্ষী গার্ডার ব্রিজ ভেঙে সংস্কার কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সিরাজগঞ্জের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম শরীফ বলেন, ব্রিটিশ আমলের ইটের মাঝে চুন-সুড়কি দিয়ে গাঁথুনি করা ছিল। গত একশো বছরের বেশি সময় এই রুট দিয়ে ট্রেন চলাচল করেছে। তাই চুন-সুড়কির শক্তি নষ্ট হয়ে ছাইয়ের মত হয়ে রেললাইন নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, রেললাইনের ওপরে থাকা গার্ডার দিয়ে প্রথমে ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর অস্থায়ী রেললাইন তৈরি করা হয়। সেই রেললাইনে এই রুটের সব ট্রেন চালানো হতো। কাজ চলাকালীন কোনো ট্রেন ব্রিজে আসার আগে ট্রেন থেমে যেত। তারপর ওপিটিতে ট্রেনের চালকের স্বাক্ষর করিয়ে ট্রেন ছাড়তে দেরি হতো।
১০ কিলোমিটার গতিতে ঝুঁকি নিয়েই ১৯ জোড়া আন্তঃনগর এবং মেইল-লোকাল- মালবাহী ট্রেন পারাপার হতো। সব ট্রেন প্রায় ১৫ মিনিট দেরিতে চলাচল করতো এখন পরীক্ষামূলকভাবে ডেডস্টপ তুলে আগামী তিন দিন পর থেকে ৮৫ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো হবে।
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের প্রকৌশলী-২ আব্দুর রহিম জানান, ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জ রুটের ব্রিজগুলো শত বছরের পুরোনো। ব্রিজগুলো সংস্কার করা হলে নিরাপদে যাত্রীবাহী সব ট্রেনগুলো চলাচল করা সম্ভব হবে। ঈশ্বরদী-ঢাকা রেলরুটে বঙ্গবন্ধু সেতুসহ ৪৯টি গার্ডার ব্রিজ রয়েছে। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ব্রিজগুলো পুরোনো ও ঝুঁকিপূর্ণ। চারটি ব্রিজ সংস্কার করা হয়েছে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী-আল ফাত্তাহ মো. মাসউদূর রহমান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশক্রমে রেল মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের আওতায় ব্রিটিশ আমলের ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজগুলো পুনঃনির্মাণ করার দায়িত্ব হাতে নেওয়া হয়েছে। পাকশী রেলওয়ে বিভাগের আওতাধীন সব ঝুঁকিপূর্ণ রেলসেতু সংস্কার করা হবে। বেশি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে ব্রিজগুলো দ্রুত সংস্কার করা হচ্ছে।
জানা যায়, ১৯১৬ সালে ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জ রেলরুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর মধ্য দিয়ে ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ চালু হওয়ার পর ব্রডগেজ ও মিটারগেজের ১৯ জোড়া ট্রেন দৈনিক এই ব্রিজের ওপর দিয়ে চলাচল করতো। ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ হওয়ার কারণে স্বল্প গতি ও ঝুঁকি নিয়ে সব ট্রেন চলাচল করতো। এতে সময় অপচয়ের পাশাপাশি ঘটতো শিডিউল বিপর্যয়। এখন আর সেই ভোগান্তি রইলো না।
pabnasamachar.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়