বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ৫ ১৪৩১ ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
পাবনার খবর
প্রকাশিত: ৪ মার্চ ২০২০
১৯১৫ সালের ৪ মার্চ হার্ডিঞ্জ ব্রিজ উদ্বোধনের পর পার হচ্ছে প্রথম ট্রেন- সংগৃহীত
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজের বয়স ১০৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ ৪ মার্চ বুধবার। ১৯১৫ সালের ৪ মার্চ ব্রিটিশ ভারতের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ওপর দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করেন। তার নাম অনুসারেই এর নাম করা হয় 'হার্ডিঞ্জ ব্রিজ'। এরপরই পত্তন হয় বর্তমান ঈশ্বরদী শহরের।
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে সেতু প্রকৌশল অফিস সূত্র জানায়, ১৯০৯ সালের প্রথম ভাগে প্রাথমিক জরিপ, জমি অধিগ্রহণ, পাথরসহ প্রয়োজনীয় নির্মাণসামগ্রী সংগ্রহের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর তৎকালীন বৃহত্তম রেল সেতুগুলোর অন্যতম পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯১৪ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরপরই ১৯১৫ সালের ১ জানুয়ারি ব্রিজের ওপর দিয়ে পরীক্ষামূলক মালবাহী রেলগাড়ি ও ২৫ ফেব্রুয়ারি আপ মালবাহী রেলগাড়ি চালিয়ে এই ব্রিজের সক্ষমতা যাচাই করা হয়। এরপর ৪ মার্চ যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করা হয়। তারপর থেকে এই ব্রিজের ওপর দিয়ে কু-ঝিকঝিক শব্দ তুলে প্রমত্তা পদ্মা পার হতে থাকে ট্রেন, যা আজও চলছে। পরে এই ব্রিজে ফুটপাত জুড়ে দেওয়া হয়। যদিও ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে রুখতে ভারতীয় বিমানবাহিনী বোমা হামলা চালিয়ে ব্রিজের একাংশ ধসিয়ে দিলে কয়েক মাস ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণের আগে পদ্মাতীরের নদীবন্দর সাঁড়াঘাট ছিল এ এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য, নদীপথে যাতায়াত, শিক্ষা-সংস্কৃতি, আর্থসামাজিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র। অল্প কিছু মানুষ বর্তমান শহর এলাকায় বাস করত। রেল যোগাযোগসহ অন্যান্য নানা কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেই সাঁড়া নদীবন্দর, ফেরিঘাটসহ অন্যান্য স্থাপনা এখন আর নেই। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাশেই সড়ক পথে চলাচলের জন্য নির্মিত হয়েছে পাকশী লালন শাহ সেতু। শত বছর আগের হার্ডিঞ্জ ব্রিজ সচল থাকলেও কালের বিবর্তনে সাঁড়াকেন্দ্রিক শহরের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। সাঁড়ার সব কোলাহল এখন ঈশ্বরদী শহরে।
পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও ঈশ্বরদীর ঐতিহাসিক নিদর্শন নিয়ে গবেষণাকারী প্রবীণ অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, হার্ডিঞ্জ ব্রিজটির বয়স ১০৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। শত বছর পূর্তির সময় ব্রিজটি পরিদর্শন করে বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন হার্ডিঞ্জ ব্রিজটি সঠিকভাবে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করলে এটি আরও অন্তত ২৫ বছর টিকে থাকতে পারে।
এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মোবাইল ফোনে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার আসাদুল হক জানান, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ যথানিয়মে সারা বছরই সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। এই ব্রিজ দিয়ে আরও অন্তত ২৫ বছর ট্রেন চলাচল করার মতো অবস্থা রয়েছে। তিনি বলেন, এই ব্রিজ রক্ষণাবেক্ষণে পাকশী বিভাগীয় সেতু প্রকৌশল অফিস সব সময় সজাগ।
পাকশী বিভাগীয় সেতু প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, এই ব্রিজের ১৫টি স্প্যানের প্রতি দুটি বিয়ারিংয়ের মধ্যবর্তী দৈর্ঘ্য ৩৪৫ ফুট দেড় ইঞ্চি এবং উচ্চতা ৫২ ফুট। প্রতিটি স্প্যানের ওজন ১ হাজার ২৫০ টন, যা রেললাইনসহ ১ হাজার ৩০০ টন, ব্রিজটিতে মোট ১৫টি স্প্যান ছাড়াও দুই পাড়ে ৩টি করে অতিরিক্ত ল্যান্ড স্প্যান রয়েছে। এদের প্রতি দুটি বিয়ারিংয়ের মধ্যবর্তী দৈর্ঘ্য ৭৫ ফুট। এভাবে ব্রিজটির মোট দৈর্ঘ্য ৫ হাজার ৮৯৪ ফুট (১ মাইলের কিছু বেশি)। ১৯১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ২৪ হাজার ৪০০ শ্রমিক কাজ করে ১৯১৫ সালে শেষ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতি :১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে রুখতে ভারতীয় বিমানবাহিনী একটি শক্তিশালী বোমা ফেলে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের একটি গার্ডার ভেঙে দেয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে তৎকালীন ভারত সরকার ক্ষতিগ্রস্ত ইস্পাতের ট্রাসেলটি কংক্রিট দিয়ে 'জ্যাকেটিং' করার পর হার্ডিঞ্জ সেতুর ওপর দিয়ে একক ব্রডগেজ লাইন বসিয়ে সীমিত গতিতে ট্রেন যোগাযোগ পুনঃস্থাপন করে। মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর থেকে আবার সচল হয়। তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী নিজে ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনে দাঁড়িয়ে হার্ডিঞ্জ সেতু পার হয়ে রেলযোগাযোগ পুনঃস্থাপন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
স/এমএস
pabnasamachar.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়