সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ১৬ ১৪৩১ ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
পাবনার খবর
প্রকাশিত: ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
পাবনার আটঘরিয়ার চাঁদপুর ও রায়পুরে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌচাষিরা মাঠ জুড়ে যেন হলুদের সমারোহ। দূর থেকে দেখে মনে হয় মাঠ যেন হলুদ চাদরে ঢাকা। মাঠের পর মাঠ সরিষার চাষ হচ্ছে আটঘরিয়ায়। বাতাসে দুলছে হলুদ ফুল। তাই সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর এলাকা থেকে খলিল মন্ডলসহ ৫ সদস্যের মধু চাষিরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সরিষার ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহে।
সরজমিনে দেখাযায় - ক্ষেতের পাশে পোষা মৌমাছির ১৯৫ টি বাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করছেন চাষিরা। পাবনা জেলার আটঘরিয়া, চাটমোহর, সুজানগর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন বিল এলাকার ফসলের মাঠে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেছে। চাষিরা সাধারণত পছন্দের একটি সরিষা ক্ষেতের পাশে খোলা জায়গায় চাক ভরা বাক্স ফেলে রাখেন। একেকটি বাক্সে মোম দিয়ে তৈরি ৮ থেকে ১০টি মৌচাকের ফ্রেম রাখা হয়।
প্রতিদিন সকাল ৭ টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মৌচাষিরা এসব মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন। বাক্সের ভেতর রাখা হয় একটি রাণী মৌমাছি। রাণী মৌমাছির কারণে ওই বাক্সে মৌমাছিরা আসতে থাকে। মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু এনে বাক্সের ভেতরের চাকে জমা করে। আর এই চাক থেকেই মধু সংগ্রহ করেন চাষিরা।
মৌ চাষের মাধ্যমে চাষিরা একদিকে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে দূর হচ্ছে বেকারত্ব। সরিষা ফুলের মধু খাঁটি ও সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানসহ বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মৌচাষিরা এসেছে ৫টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মধু চাষ করছে।
আটঘরিয়া উপজেলার দেবোত্তর ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামে আসা মৌচাষিরা আরও জানান, আমরা সরিষা, ধনিয়া,কালোজিরার ক্ষেত থেকে চার মাস মধু সংগ্রহ করি। এই এলাকায় ১মাসে ৮ থেকে ১০ মণ মধু সংগ্রহ করা হবে। ২ লক্ষ টাকার মধু বিক্রয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে আমাদের খরচ বাদে ১ লক্ষ টাকা থাকবে। এর পর লিচু ও আমের মধু সংগ্রহ করা শেষ হলে পরবর্তীতে আমরা সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করতে ১ মাস থাকবো। সেখান থেকে ৩লক্ষ টাকার মধু বিক্রয় করলে করচ বাদে আমাদের থাকবে ২ লক্ষ টাকা। এপি, প্রাণ, ডাবল কোম্পানি আমাদের পাইকারী দরে মধু কিনে থাকে। যখন মধু সংগ্রহ থাকে না তখন আমরা এই সময়টাতে কৃত্রিম পদ্ধতিতে চিনি খাইয়ে মৌমাছিদের পুষে থাকি।
তিনি আরও বলেন- আকার ভেদে একটি বাক্সে ৩০ থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত মধু পাওয়া যায়। এখানে মৌ চাষের বিশেষ বাক্স কলোনি রয়েছে ১০০টি। প্রতিটি কলোনিতে খরচ হয় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। আর প্রতি কেজি মধু বিক্রি করা হয় ফুল ভেদে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা দরে। কিছু কিছু ফুলের মধু ৬০০ থেকে ৭০০ টাকাতে ও বিক্রয় করা হয়।
মাছির রোগবালাই সর্ম্পকে তিনি আরও বলেন- মৌমাছির রোগবালাই বলতে মাইট রোগ, মাথাঘোরা রোগ হয়। পরিবহনসহ প্রতি ফ্রেম মৌমাছি প্রতিপালনে বছরে গড়ে সাড়ে ৪০০ টাকা খরচ হয়। মৌচাষের প্রধান সমস্যা মধু বিক্রি। উদ্যোগের অভাবে দেশ-বিদেশে মধুর বাজার সম্প্রসারিত না হওয়ায় উৎপাদিত মধু বিক্রি করতে তাদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
উপরন্তু ভারতীয় ডাবর কোম্পানিসহ বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানির মধু আমাদের দেশে আমদানি করা হয়। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে কষ্টার্জিত মধু বিক্রি করতে হয় পানির দরে। তার দাবি সরকারিভাবে চাষিদের কাছ থেকে মধু সংগ্রহ করা হোক।
বলেন- সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌমাছির চাষ হলে সরিষার ফলন বেড়ে যায়। সরিষা ক্ষেত থেকে বিনা খরচে মধু সংগ্রহ লাভজনক ব্যবসা হয়ে দেখা দিয়েছে। এতে কৃষক যেমন একদিকে মধু বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে ক্ষেতে মধু চাষ করায় সরিষার ফলনও বাড়ছে।
আটঘরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সজিব আল মারুফ জানান, চলতি মৌসুমে আটঘরিয়া উপজেলায় ৫০৫০ হেক্টর সরিষা আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০০০ হেক্টর জমিতে মধু চাষী মৌ বক্স স্থাপন করে মধু উৎপাদন করছে। মধু উৎপাদনের পাশাপাশি সরিষার জমিতে মৌ বক্স স্থাপন করার কারণে সরিষার পরাগায়ন ভালো হচ্ছে ফলে সরিষা উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
pabnasamachar.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়