শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ৬ ১৪৩১ ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
পাবনার খবর
প্রকাশিত: ১১ নভেম্বর ২০২২
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পদ্মা নদীর তীরবর্তী লক্ষ্মীকুণ্ডা ও সাহাপুর ইউনিয়ন এলাকায় ঘুরে দেখা মেলে অর্ধশতাধিক অবৈধ ইটভাটার। নিয়মের তোয়াক্কা না করেই পরিচালিত হচ্ছে এসব ভাটা। জ্বালানি হিসেবে গাছের কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এমনকি বড় বড় গাছ ও কাঠ চেরাইয়ের জন্য অনেক ভাটায় স’মিল বসিয়েছেন ভাটা মালিকরা। অবৈধ উপায়ে পদ্মা নদী ও আশপাশের ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে চলছে এসব ইটভাটা। ভাটা মালিকদের দাবি: এ নদীতে তাদের পূর্বপুরুষের জমি আছে, তাই নদী থেকে মাটি তুলছেন। এদিকে ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসল। ভাটার বেপরোয়া ট্রাক চলার কারণে নষ্ট হচ্ছে রাস্তা। মাটি কাটায় বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি। এসব অবৈধ ইটভাটা ও মাটি ব্যবসায়ীদের ভারী যান চলাচলের ফলে পাবনার আশীর্বাদখ্যাত মুজিব বাঁধটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে এলাকার শিশু-বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষ। সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের। পরিবেশ অধিদফতর বলছে, মাত্র তিনটি ভাটা ছাড়া বাকিগুলো অবৈধ, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভাটা মালিকরা একই সুরে বলেন, আমাদের একটা সমিতি আছে। সমিতির পক্ষ থেকে সবকিছু ঠিক করা হয়। প্রতিবছর ১৬ ডিসেম্বর ও ২৬ মার্চ একটি নির্ধারিত অর্থ সমিতিতে দিতে হয়। তবে কে চালায় এ সমিতি সে বিষয়ে জানা যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক বলেন, ‘আমার বাসা এ গ্রামে। ইটের সময় এলে চোরেরা পদ্মা নদী থেকে মাটি কেটে এনে ইট বানায়, কেউ কিছু বলার সাহস করে না। ভাটা মালিকদের গ্রুপ আছে। এদের বিরুদ্ধে কথা বললে আর এলাকায় বাস করা যাবে না।’ এক নারী বলেন, ‘সারা দিন ইটভাটার ট্রাক চলাচল করে। ধুলাবালিতে নিশ্বাস নেয়ার উপায় নেই। ঘরের টিনে ধুলা, জামাকাপড় রোদে দিলে ধুলায় মেখে যায়, খাবার প্লেটেও ধুলা। বাড়ির পাশে কোনো সবজি চাষ করা যায় না। ধুলাবালিতে সবজিগাছ মরে যায়। ভাটাগুলো বন্ধ না হলে আমাদের এ সমস্যা থেকে মুক্তি নেই।’ এলাকাবাসী জানান, দিনরাত রাস্তা ও বাঁধের ওপর দিয়ে ইটভাটার বিভিন্ন ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে রাস্তা ভেঙে গেছে। মুজিব বাঁধটি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া প্রচণ্ড ধুলাবালিতে বাড়িতে বাস করার উপায় নেই। খাবার মুখে দিলে মুখে বালুতে কিচকিচ করে। রাতে ঘুমাতে গেলে বিছানারও একই অবস্থা। একটু নিশ্বাস নেয়ার জো নেই। কয়েক মাস না যেতেই ঘরের চাল ও ঘরের আসবাব ধুলা জমে নষ্ট হয়ে যায়। এ বিষয়ে এলজিইডির কর্মকর্তা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন জানান, ওই এলাকার রাস্তা ইটভাটা, মাটি ও বালু ব্যবসায়ীদের কারণে বেশিদিন স্থায়ী হয় না। সংস্কারের কয়েক দিনের মাথায় সড়কের বিভিন্ন অংশের কার্পেট উঠে রাস্তায় গর্তের সৃষ্টি হয়। কয়েক দিন আগেও সড়ক সংস্কার করা হয়েছে এবং সেগুলো রক্ষায় ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধে এলজিইডি অফিসের বিশেষ উদ্যোগে বারপোস্ট পুঁতে দেয়া হয়। ফলে অতিরিক্ত বোঝাই গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই রাতের আঁধারে কে বা কারা সেই বারপোস্টগুলো ভেঙে দিয়েছে। এখন সেসব রাস্তায় আবার ভারী যান চলাচল শুরু হয়েছে। পাবনা পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক নাজমুল ইসলাম জানান, ঈশ্বরদীতে শুধু তিনটি ইটভাটাকে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে বাকিগুলো অবৈধ। এদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
pabnasamachar.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়