শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ শ্রাবণ ১২ ১৪৩১ ২০ মুহররম ১৪৪৬
পাবনার খবর
প্রকাশিত: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের বাথানগুলোর বিস্তীর্ণ ভূমিতে উন্নতজাতের প্রায় লক্ষাধিক গরু বিচরণ করছে। এসব গরুর আয়ের ওপর নির্ভরশীল প্রায় দুই লাখ পরিবার। বাথান থেকে প্রতিদিন সংগ্রহ করা হচ্ছে প্রায় এক লাখ লিটার খাঁটি তরল দুধ।
এ দুধ সরবরাহ করা হয় সরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটায়। বাঘাবাড়ী মিল্কভিটাসহ বিভিন্ন বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে গোখামারি ও কৃষকদের উৎপাদিত দুধ কম দামে বিক্রি করে উৎপাদন খরচ উঠছে না।
অব্যাহত লোকসানে অনেকেই খামার বন্ধ করে অন্য পেশায় চলে গেছেন। খামারিরা দীর্ঘদিন ধরে প্রতি লিটার দুধের দাম পাঁচ থেকে সাত টাকা বৃদ্ধির দাবি করে এলেও তাদের সে দাবি পূরণ হচ্ছে না।
শতাব্দীর প্রাচীনকাল থেকে পাবনা-সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের গোখামারি ও কৃষকরা উন্নতজাতের পাক-ভারতের জার্সি, ফ্রিজিয়ান, এফএস, শাহিওয়াল, সিন্ধি, হরিয়ানা ও মুলতানি গরু লালন-পালন করে আসছেন। এ অঞ্চলের গোসম্পদের ভবিষ্যৎ এবং গোসম্পদকে অর্থকরী সম্পদে রূপ দিতে স্বাধীনতার পর বাঘাবাড়ীতে দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী সমবায়ী প্রতিষ্ঠান বাঘাবাড়ী মিল্কভিটা কারখানা স্থাপন করা হয়।
জানা যায়, সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী-নিমাইচরা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের রাউতরার কাছে অস্থায়ীভাবে নির্মিত বিকল্প রিং বাঁধটি প্রতি বছর বন্যায় তলিয়ে যায় গোচারণ ভূমি। অথচ আধা কিলোমিটার স্থা৪য়ী বাঁধ নির্মাণ হলে গবাদিপশু নয় থেকে ১০ মাস সবুজ ঘাস খেতে পারত। খামারিদের লাখ লাখ টাকা সাশ্রয় হতো। অনেক খামারি অভিযোগ তুলে বলেছেন, মিল্কভিটা লাভজনক প্রতিষ্ঠানে দাঁড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো দুধের দাম না বাড়িয়ে সংগ্রহের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে।
সরকারি ও বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো খামারিদের কাছ থেকে চার দশমিক শূন্য স্ট্যান্ডার্ড ননীযুক্ত তরল দুধ বোনাসসহ ৪৩ টাকায় কিনে সেই দুধ থেকে ননী বেড় করে নিচ্ছে। পরে তিন দশমিক ৫০ স্ট্যান্ডার্ড ননীযুক্ত তরল দুধ প্যাকেটজাত করে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি করছে। তবে ভোক্তাপর্যায়ে এ দুধ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা লিটার। প্রতিলিটার দুধ থেকে ৬০ টাকার ঘি উৎপাদিত হচ্ছে। সবমিলে দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি লিটার দুধে প্রায় ১৫০ টাকা আয় করছে।
সরেজমিন জানা যায়, স্বাধীনতার আগে চলনবিল অঞ্চলের বেড়া, সাঁথিয়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর উপজেলায় ৪০০টি বাথানে প্রায় পাঁচ হাজার একর গোচারণ ভূমি ছিল। জাল দলিল ও ভূয়া পত্তনি নিয়ে এলাকার একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি গোচারণ ভূমি আত্মসাৎ করেছে।
উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে গোচারণ ভূমির পরিমাণ প্রায় এক হাজার ৪০০ একর। এরমধ্যে ফরিদপুর উপজেলায় প্রায় ১০০ একর খাস, শাহজাদপুর উপজেলায় সমর্পিত খাস ৭১২ দশমিক ৬৮ ও অর্পিত ৫৭৯ দশমিক ১৬ একর গোচারণ ভূমি রয়েছে।
মিল্কভিটার ম্যানেজার সোসাইটি জানান, মাত্র ৮৫০ একর জমি তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অবশিষ্ট ৫৫০ একর জমি ভুয়া দলিল ও পত্তনির মাধ্যমে দখল করে নিয়েছে একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি। ব্যক্তিমালিকানাধীন গোচারণ ভূমির পরিমাণ প্রায় দেড় হাজার একর। অনেকে গোচারণ ভূমি বোরো আবাদে ব্যবহার করায় বিশাল এ গোসম্পদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা অনিশ্চয়তা।
গবাদিপশুর মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পাঁচ থেকে ১৫ জন মিলে একত্রে একটি বাথানে আয়তনভেদে ২০০ থেকে ৭০০ গরু রাখেন।
জানা যায়, চুক্তিতে যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং বয়সভেদে বছরে ৩৬ থেকে ৬০ হাজার টাকা করে প্রতি রাখালকে দেয়া হয়। খাওয়া-দাওয়া, লুঙ্গি ও গামছা খামার মালিকরাই সরবরাহ করে থাকেন। পৌষ মাস থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস (ছয় মাস) পর্যন্ত গবাদিপশু বাথান এলাকায় অবস্থান করে।
খামার মালিক সাইফুল ইসলাম আজাদ জানান, প্রথম বাচ্চা দেয়ার সাথে সাথে গাভীকে নাম দরে কয়েক দিন ডাকলে বাছুরটিও ওই নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। বর্তমানে বাথানে প্রতিদিন সকাল বিকেলে সংগ্রহ করা প্রায় এক লাখ লিটার দুধ বাঘাবাড়ী মিল্কভিটাসহ বিভিন্ন বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করে আসছেন।
pabnasamachar.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়