রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ১৫ ১৪৩১ ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
পাবনার খবর
প্রকাশিত: ১৩ জানুয়ারি ২০২০
স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘ আন্দোলনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে পাবনায় রেল যোগাযোগ চালু হয়। ২০১৮ সালের ১৪ জুলাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবনায় এসে পাবনা স্টেশন থেকে রাজশাহীগামী ‘ পাবনা এক্সপ্রেস’ নামের একটি ট্রেন উদ্বোধন করেন। এর মধ্য দিয়ে শহরবাসীর দীর্ঘদিনের অধরা স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়।
গত দু’বছর ধরে পাবনা-রাজশাহী রুটে নিয়মিত চলাচলকারী এই ট্রেনটি জনপ্রিয়তার পাশাপাশি রেলওয়েকে দেখিয়েছে লাভের মুখ। তবে সম্প্রতি পাবনা শহর হয়ে জেলার বেড়া উপজেলার ঢালারচর ইউনিয়ন পর্যন্ত রেলপথের সম্প্রসারিত অংশের উদ্বোধনের জন্য দিনক্ষণ চুড়ান্ত করেছে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল বিভাগ।
সেই সাথে পাবনা এক্সপ্রেস ট্রেনের নাম ও সময় পরিবর্তন করে আগামী ২৬ জানুয়ারী থেকে ঢালারচর এক্সপ্রেস নামে ঢালারচর-পাবনা-রাজশাহী রুটে ট্রেনটি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে। এমন সিদ্ধান্তকে জেলাবাসীর জন্য অপমান মনে করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন জেলার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
রেল মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে ঈশ্বরদী-পাবনা-ঢালারচর রুটে রেলপথ নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রকল্পের আওতায় ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে ঢালারচর পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার রেললাইন ও স্টেশন নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে এই রেলপথের প্রথম পর্যায়ে পাবনা শহর পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। সম্প্রতি ঢালারচর পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হওয়ায় রেল যোগাযোগ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
রেলওয়ের পাকশী বিভাগের ম্যানেজার (ডিআরএম) আসাদুল হক জানান, ঢালারচর পর্যন্ত রেলপথ ট্রেন চলাচলের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। ইতিমধ্যেই আমরা এই রেলপথে ট্রেন চালুর বিষয়ে নির্দেশনা পেয়েছি। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সর্বশেষ সংশোধিত ওয়ার্কিং টাইম টেবিলে, পাবনা এক্সপ্রেস ট্রেনটি নতুন নামে ঢালারচর এক্সপ্রেস নামে চলাচল করবে। নতুন সময়সূচী অনুযায়ী ট্রেনটি ঢালারচর থেকে সকাল ৭ টা ২৫ মিনিটে ছেড়ে সকাল ৮ টা ৪৫ মিনিটে পাবনা পৌঁছে ৮ টা ৫২ মিনিটে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে।
সকাল ১১ টা ১০ নাগাদ রাজশাহী পৌঁছে আবার বিকেল ৪ টা ৩০ এ ঢালারচরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসবে। সম্প্রসারিত রুট চালু করতে পাবনা এক্সপ্রেস ট্রেনের নাম কেন পরিবর্তন করা হয়েছে জানতে চাইলে বিষয়টিকে মন্ত্রনালয়ের সিদ্ধান্ত জানিয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার রেলওয়ের একজন উধ্বতন কর্মকর্তার বাড়ি ঢালারচর হওয়ায় তিনি একক সিদ্ধান্তে কৌশলে ট্রেনটির নাম পরিবর্তন করেছেন। সাধারণত জেলার নামে চালু হওয়া ট্রেনের নাম এভাবে পরিবর্তন হওয়ার কোন নজিরও নেই।
এদিকে, পাবনা এক্সপ্রেস ট্রেনের নাম পরিবর্তন করে ঢালারচর এক্সপ্রেস রাখার প্রতিবাদে সোমবার বিক্ষোভ, পথসভা ও মানববন্ধনও করেছে পাবনার বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন। পাবনা শহরের সেন্ট্রাল গার্লস স্কুলের সামনে মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করে। পরে বিক্ষোভ মিছিল করে আগামী সাতদিনের মধ্যে নাম পাবনা এক্সপ্রেস পুনর্বহাল করা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন তারা। এ সময় ঢালারচর এক্সপ্রেস নামে কোন ট্রেন পাবনার উপর দিয়ে চলতে না দেয়ার ঘোষণাও দেয়া হয়।
পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সম্পাদক উৎপল মির্জা বলেন, রেল বিভাগ আকস্মিক পাবনা এক্সপ্রেসের নাম পরিবর্তন করে কেন ঢালারচর এক্সপ্রেস রাখল তা বোধগম্য নয়। ঢালারচর ইউনিয়ন তো পাবনার বাইরে নয়, এর প্রয়োজনীয়তাই বা কি?
একুশে পদক প্রাপ্ত ভাষাসংগ্রামী রণেশ মৈত্র বলেন , উত্তরাঞ্চলেই রয়েছে রংপুর এক্সপ্রেস, লালমনিরহাট এক্সপ্রেস, সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস সহ বিভিন্ন জেলার নামে ট্রেন।নাম পরিবর্তনের এমন ঘটনা সত্যিই বিরল। একটি জেলার নাম বাদ দিয়ে প্রত্যন্ত ইউনিয়নের নামে ট্রেনের নামকরনের ঘটনা কোথাও কখনো ঘটেছে কিনা-আমার জানা নেই। জেলার ইতিহাসের প্রথম ট্রেনটির নাম পাবনার নামেই থাকুক এটাই প্রত্যাশা। এ ব্যপারে জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা রাখার আহবান জানান তিনি।
এ ব্যপারে পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে ট্রেনটিকে পাবনা এক্সপ্রেস নামে উদ্বোধন করে জেলাবাসীকে উপহার দিয়েছেন, তার নাম পরিবর্তনের কোন প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না। আমি মাননীয় রেলমন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যপারে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানাবো।
স/সা
pabnasamachar.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়