শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ শ্রাবণ ১২ ১৪৩১ ২০ মুহররম ১৪৪৬
পাবনার খবর
প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০২১
সকল প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে এবার পাবনার ১১ অন্ধ ছাত্র এবার আলোকিত হওয়ার জন্য শিক্ষাযুদ্ধে নেমেছেন। জীবনযুদ্ধে জয়ি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর এ সব দৃষ্টি প্রতিবন্ধিরা পাবনার মানবকল্যাণ ট্রাষ্টের সাহায্যে পাবনা সদর উপজেলার দোগাছি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে শ্রƒতি লেখকের সহায়তায় এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। পাবনার সেন্ট্রাল গার্লস হাই স্কুল কেন্দ্রে থেকে তারা পরীক্ষা দিচ্ছেন। প্রতি বছরেই অন্ধ শিক্ষার্থীদের মধ্যে লেখাপড়ার আগ্রহ বাড়ছে। ২০১৩ সালে মাত্র ৪ জন অন্ধ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিলেও গত ৯ বছরে অন্তত শতাধিক অন্ধ ও শাররীক প্রতিবন্দি এসএসসি, এইচএসসি, বিএ এবং এমএ পাশ করেছে। এরা আর সমাজের বোঝা হয়ে থাকতে চায় না। তারা লেখাপড়া শিখে কর্মজীবী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সদর উপজেলার নিলেরপাড়ার মো. রোমান মিয়া, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীর মো. মাসুদ রানা, যশোরের মো.হাফিজুর রহমান টুয়েল, চাপইনবাবগঞ্জের মো.মোশারোফ হোসেন, নাটোরের বড়াউগ্রামের মো.আমিরুল ইসলাম, পাবনার সাঁিথয়ার মো.ছবুর আলী, পাবনা সদরের চরতারাপুরের মো.শাকিল প্রামানিক, দোগাছির আল আমিন, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মো. রবিউল ইসলাম, চাঁদপুরের হাইমচরের মো. শাজাহান আলী এবং পাবনার সাঁিথয়ার মো. শুভোন মোল্লা জন্ম খেকে অন্ধ। প্রবল আগ্রহ থাকা সত্তে¡ও অভাব অনটন ও নানা প্রতিকুলতায় এক সময় তাদের শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। পরিবারই এদের ব্যাপারে উদাসীন হয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এ সময় মানব কল্যাণ ট্রাষ্ট্রের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবুল হোসাইন খুঁজে খুঁেজ এ সব অন্ধ শিক্ষার্থীদের পড়াশনুার ব্যবস্থা করেন।
অন্ধদের লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজন ব্রেইল পদ্ধতি। অথচ দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ সুযোগ নেই। পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন শ্রæতি লেখকের। দরিদ্র এসব অন্ধদের শ্রæতি লেখক সম্মানী তো দুরের কথা লেখাপড়া করার নুন্যতম আর্থিক ব্যয় নির্বাহ করারও সক্ষমতা নেই তাদের। তার পরেও থেমে থাকেনি এ সব সংগ্রামী দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর শিক্ষা জীবন। পাবনার মানব কল্যান ট্রাষ্টের সহায়তায় তারা এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এ পরীক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্রের উত্তর মুখে বলে শ্রæতি লেখকদের শোনান এবং শ্রæতি লেখকরা সেটি লিখে আবার তাদের পড়ে শোনান। এ কারনে তাদের জন্য তিনঘন্টার অতিরিক্ত মাত্র ২০ মিনিট বেশি সময় বরাদ্দ করা হয়।
অন্ধ শিক্ষার্থী রোমান মিয়া জানান, শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রতিবন্ধীদের ব্রেইল পদ্ধতির কোন বই সরবরাহ করা হয়না। এ ছাড়া ঘন ঘন সিলেবাস পরিবর্তনের কারনে তারা চরম সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এ ছাড়া করোনার কারণে প্রতিবন্ধী পরিক্ষার্থীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পরীক্ষা পেছানোর কারনে তাদের লেখাপড়া ও যাতায়ত চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
মানবকল্যান ট্রাষ্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবুল হোসাইন বলেন, প্রায় ১‘শ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পাবনার মানব কল্যান ট্রাষ্টের সহায়তায় ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখা পড়া করছেন। এ প্রতিষ্ঠান থেকে এ পর্যন্ত প্রায় এক‘শ অন্ধকে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। তবে এ প্রতিষ্ঠানে মাত্র ২জন ব্রেইল পদ্ধতির শিক্ষক হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম। এবার ১১ জন পরীক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন।
পাবনার জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন জানান, এ ধরণের বিশেষায়িত ছাত্রদের শিক্ষা দিতে সরকার বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সহায়তা করলে তারা আর সমাজের বোঝা হবে না। অন্য দশজনের মত তারা কাজ করে সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকতে পারবে।
pabnasamachar.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়